এক দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই দেশে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল রবিবার থেকে উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর ফলে নদীতে আস্তে আস্তে পানি বাড়তে শুরু করেছে।
আরও দুএকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহতি থাকলে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ২৬ জুলাই পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলমান থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২০-২১ জুলাই থেকে পরবর্তী চার দিন ভারতের আসাম, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে একইভাবে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- ২০ জুলাইয়ের পর থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করবে। ২৫ জুলাই নাগাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
চলমান বন্যা পরিস্থিতি জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও বাড়বে। ২০ জুলাই পর্যন্ত রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
২০ জুলাইয়ের পর পানি আবারও বাড়তে শুরু করবে। ফলে জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আগামী ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানিও বাড়বে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করবে না।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, আরেক ধাপ বন্যা আসতে পারে দুই-একদিনের মধ্যেই। শুরুটা হবে উত্তরাঞ্চল দিয়ে। এরপর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি নেমে যাবে।
আরিফুজ্জামান আরও বলেন, সোমবার থেকে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। তিন-চারদিন বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা আছে। আগামী ২৬/২৭ তারিখ থেকে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি হবে। এরপর আর বন্যা হবে না।
রবিবার দেশের ১৩টি নদীর ২১ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপরে অবস্থান করেছে। ভারী বৃষ্টির কারণে আরও বেশকিছু পয়েন্টের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার ওপরে উঠে যাবে।
গতকাল ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে পানি ৫৩, ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৪, চিলমারী পয়েন্টে ৬২, যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ৮৫, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৯২, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৯৮, কাজিপুর পয়েন্টে ৯১, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮১, আরিচা পয়েন্ট ৬৮, গূড় নদীর সিংড়া পয়েন্টে ৫৩, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০০, ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর জামালপুর পয়েন্টে ২, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ৫৮, পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১০৩, ভাগ্যকূল পয়েন্টণ্টে ৬৪ এবং মাওয়া পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বিপদীসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৫, পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ২ এবং মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।