দুয়ারে নতুন বছর। বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল মহাকালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া, মৃত্যুর মিছিল, ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা ইত্যাদি এ বছর ছিল আলোচিত বিষয়। বিশে বিষময় এমন একটি বছরে করোনা ভাইরাস ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়। আমাদের অর্জন, হতাশা, বেদনা, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা পূরণের সেই ঘটনাগুলো আরেকবার দেখে নিতেই এই আয়োজন। এই পর্বে থাকছে দেশের শিক্ষাখাতের আলোচিত কিছু বিষয়। গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন ফয়জুল আল আমীন
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শিক্ষাখাত নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ১৮ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর ধাপে ধাপে বাড়ে সেই ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বরের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ জানুযারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই নিয়ে নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবন। অবশ্য গত ২৪ আগস্ট থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের ২২ হাজার কওমি মাদ্রাসা; যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্য ২৫ লক্ষাধিক।
অবশ্য এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠেছে- সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি দেশের আলিয়া মাদ্রাসাগুলোকেও অধিকতর সাবধানতার অজুহাতে বন্ধ রেখে শুধুমাত্র কওমি মাদ্রাসাগুলোকে খোলা রাখার সিদ্ধান্তটা কতটুকু যৌক্তিক? এই সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে আমাদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলছে কিনা তা নিয়ে এখনই জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখা উচিত। কেননা দীর্ঘদিন যাবৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকা এবং এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি জটিলতা দেখা দেয়ায় অনেক শহর ও গ্রামাঞ্চলের অনেক ছাত্র-ছাত্রী কওমি মাদ্রাসাগুলোতে ভর্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
করোনার কারণে স্থগিত করা হয়েছে পিইসি, জেএসসি, এইচএসসি (উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষাও। জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশের কথা রয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। এদিকে, এইচএসসির ফল প্রকাশ না করায় আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। সরকারের অন্যতম বৃহৎ অর্জন বিনামূল্যে বই বিতরণ ও সারাদেশে একযোগে ১ জানুয়ারি বই উৎসব। তবে এবার করোনার কারণে সেই বই উৎসবও স্থগিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তন আয়োজন করার থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনে ক্লাস সম্প্রচার
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও সংসদ টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনে ক্লাস সম্প্রচার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন। ভার্চুয়াল ক্লাসের সুবিধা কত ভাগ শিক্ষার্থী নিতে পারছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নানা মাধ্যমে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী এর আওতায় এসেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এ চ্যালেঞ্জে আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। টিভি ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অসমাপ্ত সিলেবাস শেষ করা হয়েছে। এতে আমাদের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে। তাদের পঠন জ্ঞান যাচাইয়ে ১৮টি অ্যাসাইনমেন্ট করানো হয়েছে। ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী তা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়েছে। যারা এ কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের বিশেষভাবে এগিয়ে নেয়া হবে।’
সচিব আরও বলেন, ‘বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনলাইন ক্লাস নিয়মিত চালিয়ে নেয়া হবে। করোনার কারণে দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের গতি বহাল রয়েছে।’
২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কার্যক্রম চালু করা হয়। এছাড়া এপ্রিল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩০ কর্মদিবসের একটি পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের পঠন জ্ঞান অর্জনে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য সপ্তাহে ৩টি করে মোট ১৮টি অ্যাসাইমেন্ট তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ
দীর্ঘ ১০ বছর স্থগিত থাকার পর নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে দুই হাজার ৬৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ এক হাজার ৬৪৬টি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৮৪টি ও মাদরাসা ৫০২টি। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২০ প্রণয়ন প্রস্তাব জাতীয় সংসদে প্রক্রিয়াধীন, বিএমটিটিআই নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে প্রক্রিয়াধীন, মাদরাসা শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫২টি মডেল মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।
বৃত্তি কার্যক্রম
মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল বৃত্তি কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। দেশের সকল বিদ্যালয়ে ১০০টি করে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ১৩০ রকমের সেবা প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রা শুরু
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১০২০/১৫, বাইপাস রোড, দাতিয়ারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩৪০০ ঠিকানায় ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবকাঠামো বিবেচনায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে চারটি অনুষদের অধীনে ৪টি প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমতি প্রদান করেছে। ২১ জানুয়ারি মঞ্জুরী কমিশনের পক্ষ থেকে এক চিঠিতে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রেজিস্ট্রারকে এই তথ্য জানিয়েছেন বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম।
- আরও পড়ুন >> ফিরে দেখা ২০২০: বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিষয়গুলো হলো- স্নাতক সম্মান পর্যায়ে ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসন।
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দিচ্ছে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের সুযোগ। রেজাল্টের ওপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০০% স্কলারশিপ এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় Fall 2020 সেমিস্টারে ভর্তি ফি এবং টিউশন ফি’র ওপর ছিল ৩০% ছাড়।