রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণ: ৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাফাত
ফাইল ছবি

বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে। এ ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। এরপর চার বছর পেরিয়ে গেছে।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচারিক আদালতের কার্যক্রমই এখনও শেষ হয়নি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন অজুহাতে বিচার কাজে বিলম্ব করছেন বলে অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষের। চলতি বছরেই মামলাটির বিচারিক আদালতের কার্যক্রম শেষ হবে আশা করছেন তারা।

মামলাটি ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের অবস্থায় রয়েছে। মামলায় ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২১ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ৪ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমিকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিলেই মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) মামলাটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন অজুহাতে বিচারিক কার্যক্রম বিলম্বিত করছেন। তবে এই বছরেই মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমিকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করা হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তিনি সাক্ষ্য দিলেই আমরা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করব। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি হবে। তারপরই যুক্তি উপস্থান শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে।’

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আলোচিত মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষের উচিত দ্রুত নিষ্পত্তি করা। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছি।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্যা বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। মেডিকেল রিপোর্টে আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ডাক্তার এসে আদালতে দেয়া সাক্ষ্যতেও এটা বলে গেছেন। মামলাটির বিচার চলছে। আমরা সেটি মোকাবিলা করছি। এর মাধ্যমেই আসামিদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হবো। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবেন।’

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর ৬ মে সন্ধ্যায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনকে আসামি করে বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। এরপর ১০ মে রাতে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ওই দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না যে সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সেখানে যাওয়ার পর তারা কোনো ভদ্রলোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিল। বাদী ও তার বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এ সময় আসামিরা তাদের গাড়ির চাবি বাদীর বন্ধু শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। বাদীকে মারধর করা হয়। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিও ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন।

এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় রহমত আলীকে পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পান। লোকলজ্জা এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

ওই বছরের ৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ইসমত আরা এমি।

১৩ জুলাই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (২) -এর বিচারক শফিউল আজম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামি সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ (১) ধারা এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৯ (১) এর ৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

অভিযুক্ত পাঁচজন হলেন- আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী। পাঁচ আসামির সবাই বর্তমানে জামিনে আছেন। মামলাটিতে আসামিদের মধ্যে রহমত আলী বাদে অপর আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন