ডেস্ক রিপোর্ট
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চাইতে এখন থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। মানুষ কিন্তু ভুলে যায় এ জন্য আমাদের উন্নয়ন দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, তাদের কাছে বারবার যেতে হবে।’ শনিবার (৭ জুলাই) গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তৃব্য রাখেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের অর্থনীতি আজ উন্নত হয়েছে এবং জনগণের আয় বাড়ায় তারা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারছে, এ কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলই দেশের দরিদ্র মেহেনতি মানুষের জন্য কিছু করেনি।’
দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাওয়ায় তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মানুষও আর ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না, একটা মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না, সকলেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভোট চাইতে হবে। যেন তারা অতীতের মতো আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।’
দল এবং সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং দ্বন্দ এখনই মিটিয়ে ফেলার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতেই কঠিন হবে। কোনো আসন নিয়ে অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ নেই, কোনো আসন নিয়ে অমনোযোগী হওয়ার মানেই হবে, সে আসনে পরাজয়, যার কারণে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে এই বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার মানুষের ওপর, তাদের জানমালের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেবে, দারিদ্র্য বাড়িয়ে শিক্ষার হার কমিয়ে ফেলবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি, উন্নয়ন কর্মকান্ড সব বন্ধ করে দেবে, অতীতে যেমনটি করেছিল। কাজেই আপনাদের শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, এর সহযোগী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ-প্রত্যেকটা সংগঠন যেন সুসংগঠিত হয় এবং নিয়ম মেনে চলে, ডিসিপ্লিন মেনে চলে। সেই বিষয়টাতে লক্ষ্য রাখতে হবে।’নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনগণের কাছে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় জনগণ যেন ভোট দেয় সেই আবেদন করবেন। আর অন্যরা তো দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তাই দেশের কোন উন্নয়ন তারা করবে না।’
২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়ার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই মানুষ হত্যা করেও সে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি কারণ জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল। আর এই জনগণইতো মূল শক্তি। আমাদের শক্তিই হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণকে নিয়েই আমরা রাজনীতি করি, তাদের কল্যাণেই আমাদের রাজনীতি।এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের তুলে ধরতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই গ্রামের মানুষ সুখের মুখ দেখছে, দুটো পয়সা কামাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে, হাতে হাতে মোবাইল পাচ্ছে, সুন্দর করে জীবনযাপন করার সুযোগ পাচ্ছে, বাড়ি পাচ্ছে, রাস্তা পাচ্ছে, সবকিছু পাচ্ছে।’
এরআগে ৩০ জুন চট্ট গ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়েরর বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত ২৩ জুন জেলা-উপজেলা, মহানগর, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলার চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রথম পর্যায়ের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র: বাসস