প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চলচ্চিত্র মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে সমাজে অনেক বক্তব্য পৌঁছানো যায়। দেশ ও সমাজের ভালোর জন্য অনেক ভূমিকা রাখতে পারে চলচ্চিত্র। একটা সময় সিনেমা দেখা বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। এখন মানুষ আবারও সিনেমা দেখছে। এটা আনন্দের খবর।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের কলা-কুশলীদের মাঝে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। আজ (৮ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রযোজকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে যত বেশি সম্ভব চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংগ্রাম সে চিত্রগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ আমাদের স্বাধীনতা দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের ফসল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই।’ শেখ হাসিনা বলেন,‘কোনদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে থাকতে চাইনা। কাজেই শিল্পের দিক থেকে এমনকি চলচ্চিত্র শিল্পে আমরা বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই । এরজন্য যা করা দরকার আমরা তা করবো। কারণ এদেশের এফডিসি এবং চলচ্চিত্র শিল্পের জন্ম আমার বাবার হাত ধরেই,’বলেন প্রধানমন্ত্রী ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চিত্রনায়ক ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান ফারুক) এবং চলচ্চিত্র নায়িকা ববিতা (ফরিদা আখতার ববিতা) অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে চঞ্চল চৌধুরী তার আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা ‘অস্বিত্ব’ চলচ্চিত্রের জন্য এবং কুসুম সিকদার ‘শংখচিল’ চলচ্চিত্রের জন্য যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।
আধুনিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, ‘মান সম্পন্ন চলচ্চিত্র যেন নির্মাণ হয় যা আমদের সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা সবসময় চাইতেন আমাদের চলচ্চিত্রগুলো যেন দেশের ঐহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে জনগণকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে আজীবন সন্মাননা লাভকারী চিত্রনায়ক ফারুক এবং চিত্রনায়িকা ববিতা নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং তথ্য সচিব মো. আব্দুল মালেক।
মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দ, শিল্পী, কবি, সহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী সহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এবং চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বস্তরের কলা-কুশলী এবং কুশিলববৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’র জন্য ফরিদুর রেজা সাগর,‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের জন্য অমিতাভ রেজা চৌধুরী শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন।
মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা বৃন্দ, শিল্পী, কবি, সহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী সহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এবং চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বস্তরের কলা-কুশলী এবং কুশিলববৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’র জন্য ফরিদুর রেজা সাগর,‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের জন্য অমিতাভ রেজা চৌধুরী শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন।
নাট্য অভিনেতা ও কাহিনীকার তৌকির আহমেদ তার ‘অজ্ঞাতনামা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, রাশেদ জামান শ্রেষ্ঠ চিত্র গ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে উত্তম গুহ, শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শেষ্ঠ সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালকের পৃথক দুটি ক্যাটাগরিতে ইমন সাহা এবং শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে মেহের আফরোজ শাওন প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা হিসেবে শহীদুজ্জামান সেলিম, সেরা অভিনেতা পাশ্বচরিত্রের জন্য যৌথভাবে আলিরাজ ও ফজলুর রহমান বাবু এবং তানিয়া আহমেদ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্বচরিত্রের পুরস্কার লাভ করেন।
পরে এ প্রজন্মের চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং চিত্রনায়িকা পুর্ণিমার উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।