জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পেছনে যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা হত্যার রহস্য রয়েছে তা উদঘাটনে ‘কমিশন’ গঠনের কথা ভাবছে সরকার। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বলে নিশ্চিত করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু দাবি উঠেছে, যেহেতু সবাই চাচ্ছে, সেহেতু আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ১২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এর মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। ছয়জন বিদেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের দেয়া দণ্ড কার্যকর করতে সরকার কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনাকে নিছক কোনো হত্যাকাণ্ড হিসেবে ভাবলে তার পুরো চিত্রটি পাওয়া যাবে না। যে মামলাটির মাধ্যমে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছিল তাও যথেষ্ট ছিল বলে মনে করেন না অনেকেই। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও এমনটাই মত দিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের এক শোকসভায়।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, এটি শুধু মহান একজন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, এর পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক চালচ্চিত্র। এর পেছনে অনেক রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। যদি একটি কমিশন গঠন করা হয়, তাহলে সেটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হবে এবং জাতির কাছে বিষয়টি ইতিহাস উপযোগী হবে বলে মনে হয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারলেও এই হত্যার পেছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি। এই ষড়যন্ত্রের অনুসন্ধানে একটি কমিশন গঠন করা সময়ের দাবি বলেই তাদের মত।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মানেই হলো বাংলাদেশকে হত্যা করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে জড়িত, এটা সর্বজনবিদিত। প্রতিষ্ঠিত সত্য বিষয়ের জন্য গণকমিশনের প্রয়োজন নেই।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের যে রহস্য, হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে ষড়যন্ত্র তা এখনো বের হয়নি। হত্যার যে রহস্য, ষড়যন্ত্র উদঘাটনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা দরকার। এ দাবিটি আমরা বরাবরই করে এসেছি।
আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, একটা জুডিশিয়াল কমিশন গঠিত হতে পারে। প্রকৃত ঘটনার পূর্বাপর উদঘাটনে এই কমিশন কাজ করতে পারে। এ ঘটনায় দূর থেকে জড়িতদেরও ফৌজদারি আইনে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের নতুন করে বিচার করতেও আইনে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ অনেকে দূর থেকে এ ঘটনায় ইন্ধন জোগাতে পারে, অনেকে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে ঘটনা ঘটতে দিতে পারে, এরকম সকলকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে।