রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সূ চির বক্তব্যে বাংলাদেশ হতাশ

বিশেষ প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে থাকার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে মঙ্গলবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি সিঙ্গাপুরে যে বক্তব্য দিয়েছেন-তাতে হতাশ হয়েছে বাংলাদেশ। সূ চির ওই বক্তব্যে বাংলাদেশের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসির।

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, নভেম্বরে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির ১০ মাস পরেও প্রধান কোনো শর্তই মিয়ানমার বাস্তাবায়ন করেনি। তারা বলেন, দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা ছাড়া কিছুই করেনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চার দশক ধরে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত আরসার হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত এ সংকটের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসনের যাবতীয় পথ রুদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমার। পাশাপাশি দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে আসছে।
সিঙ্গাপুরে ওই অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি বলেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের নিতে প্রস্তুত, তাদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গাও ঠিক হয়েছে। কিন্তু তাদের পাঠানোর দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে অং সান সূ চি-র এমন বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, মিয়ানমারের নেত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যেটা আসলে বাস্তব অবস্থা থেকে শত যোজন দূরে, এধরণের মন্তব্য সত্যিই খুব বিস্ময়কর এবং খুবই হতাশাজনক বটে।

আবুল কালাম বলেন, গত বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়। এরপর দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু চুক্তি সইয়ের পর ১০ মাসেও সেই চুক্তির প্রধান কোনো শর্তই মিয়ানমার বাস্তবায়ন করেনি।
আবুল কালাম বলেন, মূল সমঝোতা চুক্তিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, তারা প্রত্যাবাসিত হবে তাদের নিজেদের গ্রামে। সম্ভব হলে স্বগৃহে। এবং কোনো কারণে যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের এমন স্থানে নিতে হবে, যেটি তাদের গ্রামের নিকটবর্তী। কিন্তু মিয়ানমার মোটাদাগে শুধু দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করেছে।

তিনি জানান, সপ্তাহ দেড়েক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে তিনিসহ যে প্রতিনিধি দল মিয়ানমার গিয়েছিল, সে সময় তাদের ওই তিনটি ক্যাম্প তারা দেখিয়েছেন।

কক্সবাজারে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা মো. নূর বলেন, জমিজমা বা নিরাপত্তা এবং মর্যাদা নিশ্চিত না করে তারা ফিরে গেলে আবারও নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে বলে তারা মনে করেন।

তিনি বলেন, আমাদের ফেরত নেয়ার বিষয় নিয়ে কিছুই করেনি মিয়ানমার সরকার। আমাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনাই তারা করেনি। বিশ্বকে দেখানোর জন্য নাটক বানাচ্ছে মিয়ানমার সরকার।
ঘরবাড়ি, নিরাপত্তা এবং মর্যাদাসহ অধিকার নিশ্চিত করা না হলে মিয়ানমার ফেরত যেতে চান না ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীরা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে