উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৩ রানে বাংলাদেশর জয়

ক্রীড়া ডেস্ক

বাংলাদেশের সাথে লড়াই করে হেরে গেলো আফগানিস্তান। মাহমুদউল্লাহ-ইমরুলের হাফসেঞ্চুরিতে ২৪৯ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ সংগ্রহ করে থামে আফগানিস্তান। ফলে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৩ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ৪৯তম ওভারে নবীর উইকেট ছিলো ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। সাকিবের অাগের বলে ৬ মেরে ব্যবধান কমান নবী। ৪র্থ বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হলে স্বস্তি নামে বাংলাদেশ শিবিরে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিলো ৮ রান। এমনকি শেষ বলে প্রয়োজন ছিলো রানের। মোস্তাফিজের দারুণ বোলিংয়ে জয় সহজ হয় বাংলাদেশের। মাত্র ৪ রান দিয়ে উইকেন তুলে নেন মোস্তাফিজ।

২৫০ রানের চ্যালেঞ্জ। এই উইকেটে ২৫০ রান জয়ের জন্য ভালোই যথেষ্ট। তবুও শুরুতে পরপর দুই উইকেট পড়ার পরও আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি ৬৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে ফেলেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো মোহাম্মদ শাহজাদ হাফ সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা ধীরে ধীরে বের করে আনতে শুরু করে দিয়েছিলেন। মাশরাফি নিজে, নাজমুল ইসলাম অপু, মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা সাকিব আল হাসান- কেউই পারছিলেন না শাহজাদকে একটু ফাঁদে ফেলতে।

universel cardiac hospital

শেষ পর্যন্ত মাশরাফি দ্বারস্থ হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অফ ব্রেক বোলার হলেও তিনি নিয়মিত নন। মাঝে-মধ্যে প্রয়োজন হলে অকেশনাল বোলার হিসেবে তাকে ব্যবহার করেন অধিনায়ক। এবারও মাশরাফি আস্থা রাখলেন তার ওপর। সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিলেন প্রথম ওভারেই, ভয়ঙ্কর শাহজাদকে ফিরিয়ে দিয়ে। ওভারের ৪র্থ বলটি তিনি কিছুটা সুইং করিয়েছিলেন। শাহজাদ ব্যাকফুটে গিয়ে জায়গা তৈরি করে চেষ্টা করেন খেলার। কিন্তু মিস করলেন তিনি। বল গিয়ে আঘাত করলো সোজা উইকেটে। ৫৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। দলীয় রান তখন ৮৯।

দুর্দান্ত এক ফিল্ডিং করে রহমত শাহকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। নাজমুল ইসলাম অপুর বলে খেলেছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন রহমত শাহ। রান নেয়ার জন্য দৌড় দেন তারা। সাকিব ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাত দিয়ে বল ফেরান। উল্টে অন্য হাত দিয়ে বলটি থ্রো করেন। সরাসরি হিটে রানআউট হয়ে গেলেন রহমত। তার আগে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল করতে এসেই প্রথম বলে উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে ইহসানউল্লাহ ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল ইসলাম অপুর হাতে। ১১ বলে ৮ রান করে ফিরে যান তিনি।

বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্যের শিকারে ৮৭ রান তুলতে ৫ উইকেট হারায়। সেখান শুরু মাহমুদউল্লাহ-ইমরুলের প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে তারা যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ১২৮ রান।

মাহমুদউল্লাহ খেলেন দলীয় সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংস। আর খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উড়ে যাওয়া ইমরুলকে তো আউটই করতে পারেননি আফগান বোলাররা। ৮৯ বলে হার না মানা ৭২ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। সাকিব ও মুশফিকের দুঃখজনক রান আউটের পর বলা চলে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। সেঞ্চুরির পথেও হাঁটছিলেন তিনি। কিন্তু হলো না। আফতাব আলমের বলে রশিদ খানের হাতে ধরা পড়ে থামতে হলো ৭৪ রানে। ৮১ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ৩ চার ও ২ ছক্কায়। মাহমুদউল্লাহর পর ফিফটির দেখা পেয়েছেন ইমরুল কায়েসও।

শুরুর ধাক্কার পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস বেশ গুছিয়ে নিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু রশিদ খান বোলিংয়ে আসতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আগের বলে আফগান স্পিনারকে চার মেরে পরের বলটাতেই আবার ‘বিগ’ শট খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ব্যাটের উপরের দিকে লেগে বল ভাসতে থাকে বাতাসে। সহজ ক্যাচটা নিতে কোনও অসুবিধাই হয়নি ইহসানউল্লাহর। যাওয়ার আগে ৪৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে লিটন করেন ৪১ রান।

লিটনের আউটের দুই বল পরই আবার ধাক্কা বাংলাদেশ শিবিরে। দুঃখজনক রান আউটে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে সামিউল্লাহ শেনওয়ারির সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে গেলে শূন্য রানে ফেরেন সাকিব। মুশফিকও একই ভুলের শিকার! চমৎকার ব্যাটিংয়ে আরও একটি বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানও শিকার রান আউটের। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে মোহাম্মদ নবীর দেওয়া থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার রশিদ। তাতে ৩৩ রানে থামে মুশফিকের ইনিংস।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ মিঠুন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে