বিএনপি কি নেতৃত্বশূন্যের পথে?

বিশেষ প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিদেশি রাষ্ট্রের তাগাদা রয়েছে। সঙ্গে দীর্ঘ এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকায় অভ্যন্তরীণ চাপেও রয়েছে দলটি। আর এমন প্রেক্ষাপটে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মামলার রায়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এদের একজন কারাগারে। অন্যজন নির্বাসনে।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় হয়। এতে ৫ বছর কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। আর গত ১০ অক্টোবর রায় হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের দুই মামলার। এতে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতির ওপর যোগ হয়েছে, সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা। ফলে সামনের নির্বাচন ঘিরে কঠিন চাপের মুখে পড়েছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন ঘিরে হাল ধরার মতো নেতা সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিএনপি।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা কঠিন সময় পার করছেন সত্যি। কিন্তু, এখনই বিএনপির মতো এত বড় দল নেতৃত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছে, উপসংহার টেনে দেয়া সমীচীন হবে না। রাজনীতির রং ক্ষণে ক্ষণে বদলায়, নির্বাচনের আগে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। বর্তমান চিত্রের উল্টোটিও তখন দেখা যেতে পারে।

তবে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মতৎপরতায় সংকট স্পষ্ট। ২০ দল নিয়ে ঢাউস জোট থাকার পরেও দলটির বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টাকে সামনে আনছেন অনেক বোদ্ধা। তাদের মতে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই বিএনপি সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে চাইছে।

ঘরোয়া সভা-সমাবেশে হুংকার তুলেই দায় সারেন সিনিয়র নেতারা। এ সংকট কাটতে না কাটতেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দেয়া হয়। এই রায়ের পর বিএনপি তারেক রহমান ইস্যু চাঙ্গা করতে গিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবির আন্দোলন থেকে কিছুটা হলেও পিছু হটেছে। চলতি অক্টোবরেই এই ইস্যুতে সক্রিয় আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হলেও তা ডাইভার্ট করে এখন তারেক রহমানের মুক্তির আন্দোলনে রূপ দিয়েছে।

ফলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে সক্রিয় কর্মসূচি নিয়ে নতুন সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে হাই-কমান্ডকে।

সম্প্রতি বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির ১ হাজার ৫১২ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গুম হয়েছেন ১ হাজার ২০৪ জন। অবশ্য গুমদের মধ্যে থেকে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৭৮১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে।

তবে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে ৪ হাজার ১৪৯টি। এর মধ্যে জ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৯২ এবং অজ্ঞাত আসামি ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জন। জেল-হাজতে আসামির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন। আসামির তালিকায় দলের শীর্ষ নেতারাও রয়েছে।

নেতৃত্ব সংকটের কথা মুখে স্বীকার না করলেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠিকই বলছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দণ্ডিত করা হয়েছে মূলত বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় শীর্ষ দুই নেতাকে সাজা দিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি জনগণের দল। কোনো পরিস্থিতিকেই আমরা চাপ মনে করি না, পরীক্ষা মনে করি। বর্তমান সরকার আমাদের যে পরীক্ষায় ফেলছে, তাও আমরা পাস করতে সমর্থ হব। সঠিক সময়ে জনগণ জেগে উঠে এই অবৈধ মসনদ চুরমার করে দেবে।

এদিকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তিন দিনের মধ্যে সরকার পতনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এই ঐক্য গঠনের পর গতকাল শনিবার থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন।

ঐক্য গড়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতা ফখরুল শনিবার বলেন, আমরা এখন একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেটি একটি মুক্ত বাংলাদেশের। সেই স্বপ্নটি হলো একটি মুক্ত সমাজের। যারা লড়াই করছে, তারা সুস্থ সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চায়। আজকে এই লড়াই শুরু হলো নতুন আঙ্গিকে। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আমরা শপথ নিয়েছি গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় তরে আমরা ঘরে ফিরব। এখনও অনেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাহিরে রয়েছে। আমি তাদেরকে আহ্বান জানাব যে, আসুন আমরা সবাই এক হয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকারগুলো আদায় করি।তবে কি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যই বিএনপি ড. কামালদের ঐক্যে যোগ দিয়েছেন?

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে