দেশব্যাপী পুতুলনাচের বিকাশ ও প্রসারের লক্ষ্যে নীতিমালা

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলার লোকনাট্যের প্রাচীন মাধ্যমের অন্যতম পুতুলনাচ। বিভিন্ন পার্বণ, উৎসবে পুতুলনাচের আয়োজন এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বাঙালি সংস্কৃতিতে পুতুলনাচ এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে শুধু লোকনাট্য নয়, গীতিকার ও কবিরা পুতুলনাচকে নিয়ে বহু গান, কবিতা রচনা করতেন। মধ্যযুগের অনেক কাব্যে পুতুল, পুতুলনাচ, পুতুলনাচকার, বাজিকর, সূত্রধর ইত্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেক মানুষ পুতুলনাচকে নিতেন পেশা হিসেবে। নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে পুতুলনাচ এখন গল্প। সরকার বিলুপ্তপ্রায় এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘পুতুলনাট্য শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০১৮’ ঘোষণা করেছে। হারিয়ে যাওয়া পুতুলনাট্য চর্চার সার্বিক মানোন্নয়ন এবং দেশব্যাপী এর বিকাশ ও প্রসারই নীতিমালার মূল লক্ষ্য।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পুতুলনাচ শিল্প বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি পর্যায়ে অনুদান, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। এখন থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণমুখী নানা প্রচার কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে পুতুলনাচ। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কল্যাণ ও অকল্যাণ বিষয়ে সচেতন করার কাজেও পুতুলনাচ ব্যবহার করা হবে। প্রতিবছর কয়েকটি পুতুলনাচ দলকে সরকারি অনুদান দেওয়া হবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবীণ ও দুস্থ পুতুলনাচ শিল্পীকে অনুদান বা ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

universel cardiac hospital

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পুতুলনাচ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ শিল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সরকারের উদ্দেশ্য। এ জন্য দেশের বিভিন্ন ধারার পুতুলনাচের দলগুলোকে শিল্পকলা একাডেমিতে নিবন্ধিত হতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে কত ধরনের পুতুল ও কত ধরনের কতটি পুতুলনাচ দল আছে এবং দলগুলোর বর্তমান অবস্থা কী- তার একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে। নিয়মিত প্রদর্শনী ও উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে পুতুলনাচ দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হবে।

এ জন্য শিল্পকলা একাডেমিসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থানে পুতুলনাচ পরিবেশন উপযোগী মঞ্চসহ মিলনায়তন তৈরি করা হবে। এসব মিলনায়তনে ২০০ থেকে ৩০০ দর্শক বসতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের মঞ্চ তৈরির কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। বিভিন্ন দিবসে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনায় পুতুলনাচের আয়োজন করা হবে।

সারাদেশে বংশপরম্পরায় অতীতে যারা পুতুলনাচ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের বংশধরদের খুঁজে বের করে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এ শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে পুতুলনাচ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ভালো পুতুলনাচের দলকে প্রদর্শনীর জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। চালু করা হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

এই নীতিমালা বাস্তবায়নে ‘পুতুলনাট্য উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করা হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থ, জনপ্রশাসন, আইন, তথ্য, শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, পুতুলনাচ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। পদাধিকারবলে এই কমিটির প্রধান হবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।

এ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস গণমাধ্যমকে বলেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়নে এখন কমিটি গঠন করা হবে। এরপর কমিটি সংশ্নিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে কোথায় কী ধরনের সুবিধা দেওয়া দরকার, তার সুপারিশ করবে। সুশারিশগুলো সংশ্নিষ্টরা বাস্তবায়ন করবে। শিগগিরই কমিটি গঠন করা হবে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে