সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এই কর্মসূচি শেষে আবার ৩০ নভেম্বর থেকে ডাক দেয়া হয়েছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন শ্রমিকরা কোনো গাড়ি চালাবে না।’
পরিবহন শ্রমিকরা এর আগেও নানা সময় এই ধরনের কর্মসূচি দিয়ে তীব্র ভোগান্তি তৈরি করেছেন। আবারও সেই ভোগান্তি ফিরে আসার আশঙ্কা এরই মধ্যে দেখা গিয়েছে। যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই কর্মসূচি তারা বাধ্য হয়ে নিয়েছেন। এতেও কাজ না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
এই ধরনের ধর্মঘটের প্রভাব কী হতে পারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় তা দেখা গেছে। বাস-ট্রাক বন্ধ করে দেয়ায় সারাদেশেই স্থবিরতা নেমে এসেছিল।
যে সংগঠন এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সেটির কার্যকরী সভাপতি। তবে এই কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে তার কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান ওসমান আলী।
এই কর্মসূচিতে নৌমন্ত্রীর ইন্ধন আছে কী না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এমনটা নয়। আমরা সংগঠনের সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান আমাদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি। তিনি আইনের কঠিন ধারাগুলো ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি।
সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনার দায়ে গ্রেপ্তার চালকের জামিনের বিধান না রাখা, শ্রমিকদের অর্থদন্ড না রাখার দাবিসহ ৮টি দাবি জানাচ্ছে শ্রমিকরা।
এসব দাবিতে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৮ দফা দাবিতে সমাবেশ করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
৮ দফা দাবির বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, সড়ক পরিবহন আইনের ধারা বাতিলসহ আমাদের আট দফা দাবি বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। সড়ক পরিবহন ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না।
শ্রমিকদের আপত্তির কারণ, আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনা যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা প্রমাণ হয়, তাহলে বিচার হবে ৩০২ ধারায়, সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ফাঁসি।
পরিবহন শ্রমিককের কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালান। তার ওপর আবার বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।
এ অবস্থায় এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনে আট দফা দাবি জানায় শ্রমিক ফেডারেশন। এর মধ্যে আছে: ১. সড়ক দুর্ঘটনায় সব ধরনের মামলা জামিনযোগ্য করা; ২. শ্রমিকদের অর্থদ- পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না; ৩. সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে; ৪. ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা; ৫. ওয়াস্কেলে (ওজন স্কেল) জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা; ৬. সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ; ৭. গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকা; ৮. সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপকহারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা এবং লাইসেন্স ইস্যুও ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ছাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু, ঢাকা মহানগর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আলী সোবা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়। ওই সময় ৯ অক্টোবর, বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা।
গত ২২ অক্টোবর প্রথমবার সরকারিভাবে পালন করা জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় শ্রমিক সংগঠনগুলো যোগ দেয়নি এই আইনের প্রতিবাদে। যদিও শ্রমিকদের এসব দাবির পক্ষে নন জানিয়ে তাদের নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, তিনি সংসদে পাস হওয়া আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।