ডাক পিয়নের পাঠশালা : শিক্ষার্থীদের মানবিক হয়ে ওঠার একটি গল্প!

শেখ শামীম, নেত্রকোণা থেকে

কলমাকান্দায় ঝরে পড়া ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন - সাহায্যের ডাক পিয়ন। ছবি : মত ও পথ


সাহায্যে ডাক পিয়ন সামাজিক সংগঠনটি মানবিক উৎকর্ষের একটি অনন্য উদাহরণ।

‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ…’ দূর থেকেই কানে ভেসে আসছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সংকল্প’ কবিতাটি। কাছে গিয়ে দেখা গেল পাঁকা  টিনশেড একটি ঘরে বিভিন্ন বয়সী  কোমলমতি ৮৮ জনের মতো ক্ষুদে শিক্ষার্থী।

ছোট ছোট কয়েকটি  ভাগ হয়ে বসেছে তারা। এ শিক্ষার্থীদেরই একটি দল আবৃত্তি করছিল কবিতাটি। অন্যদের দেখা গেল, আঁকাআঁকি-লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। কেউ আবার কোনো কিছু বুঝতে না পারলে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাই এটা কী?’ ভাইও হাসিমুখেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন সব।

universel cardiac hospital

কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলেজ রোডের চিত্র এটি।  বিদ্যালয়গামী অথচ ঝরেপড়া, সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম ৮৮টি শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন সাহায্যের ডাক পিয়ন সংগঠনটি ।


সাহায্যে ডাক পিয়ন সামাজিক সংগঠন আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক হয়ে ওঠার একটি গল্প! এ গল্প শিক্ষক হিসেবে আমাকে আলোয় আলোড়িত করেছে। আর শিক্ষার আলো বিস্তারে এই সংগঠনটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস

সাহায্যের ডাক পিয়ন সংগঠন নামের উদ্যোক্তারা হচ্ছেন- ইমরান হাসান, বাবুল হাসান, রমজান মিয়া, উসমান আলী, দুর্জয় দাস, গালিব খান ও খোকন মিয়া। এরা সবাই কলমাকান্দা সরকারি ডিগ্রী কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী। তারা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করেছেন। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলেজ রোডে ইমরান হাসান একটি পাঁকাদেয়ালসহ দোচালা টিনের  ঘর । সকাল ৭.৩০ থেকে ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস নেয়া হয়।  ঘরটির ভেতর ৮৮ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী । সবাই  সারিতে বসে পড়ালেখা করছে। বাবুল হাসান নামের একজন শিক্ষার্থী ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।  চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মম আশ্চর্য জানায়, সাহায্যের ডাক পিয়ন সংগঠন কেন্দ্রে পড়তে তাদের ভালো লাগে। তারা আরও পড়াশুনা করতে চাই, আমরা ঝর তে চাই না, পড়তে চাই !

সাহায্যের ডাক পিয়ন সংগঠন এর রমজান মিয়া  বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে কলেজ রোড, চাঁনপুর,  রাজাপুর ও চকপাড়া  এলাকায় জরিপ করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার কেমন। আর্থিক অসচ্ছলতা, স্থানান্তরিত হওয়া, পরীক্ষাভীতিসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে কিংবা স্কুলে যায় না। এরপর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি। অভিভাবকদের বুঝিয়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্রে আনা হয়। তিনি দৈনিক এক ঘণ্টা বাচ্চাদের শেখান। আন্তরিকভাবে পড়ানো হয় বলে এখানে বাচ্চাদের পড়া নিয়ে ভয়ডর আর থাকে না। আর যেকোনো কিছু শিশু নিজে করে করে শেখে। ফলে শিক্ষাটা তার জীবনে স্থায়ী হবে। 

সাহায্যের ডাক পিয়ন সংগঠন এর ইমরান হাসান  বলেন, আমরা সাত বন্ধু মিলে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা ঝরে পড়া  বিভিন্ন বয়সী  কোমলমতি ৮৮ জনের মতো ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি । এমনকি  তাদের মাঝেও সাধ্য অনুযায়ী শিক্ষা উপকরণ প্রদান করছি। অনেক স্বপ্নের মাঝে আমরা এলাকার প্রতিটি শিশুর হৃদয়ে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেওয়ার স্বপ্নও দেখি। ঝরেপড়া শিক্ষাবিমুখ শিশুদের কাছে এখন আদর্শ শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কলমাকান্দা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার চন্দ্র বনিক ” মত ও পথ “কে বলেন সাহায্যে ডাক পিয়ন সামাজিক সংগঠন আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক হয়ে ওঠার একটি গল্প! এ গল্প শিক্ষক হিসেবে আমাকে আলোয় আলোড়িত করেছে। আর শিক্ষার আলো বিস্তারে এই সংগঠনটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন ” মত ও পথ “কে বলেন সাহায্যে ডাক পিয়ন সামাজিক সংগঠনটি মানবিক উৎকর্ষের একটি অনন্য উদাহরণ। উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে এই সংগঠনকে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে