একদল অপরাধী রুট পারমিট ও বৈধ কাগজপত্র নেই এমন বাস নিয়ে অপরাধে নেমেছে। এসব বাসের চালকেরও থাকে না লাইসেন্স।
এই অপরাধীচক্রের টার্গেট থাকে বাসের বিশেষত নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও অপহরণ করা। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে র্যাব। র্যাব-১-এর একটি দল নজরদারি চালিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টাকালে এক নারী যাত্রীকে উদ্ধার করেছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে নির্জন এলাকা থেকে ছদ্মবেশী চালক খলিল মিয়া, বাসের সুপারভাইজার মেহেদী হাসান বাবু ও হেলপার রাকিব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওরা অপহরণ ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটানোর জন্য অবৈধভাবে বাস নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। অপহরণে ব্যবহৃত ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামের একটি বাসও জব্দ করেছে র্যাব।
এদিকে বাসে রুমাল বিক্রির নামে কৌশলে যাত্রীদের অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া এক অজ্ঞান পার্টি চক্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব-১। শনিবার রাতে টঙ্গী থেকে এই সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টির সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তারা হলো—রাকিব ওরফে সুমন, নাঈম ইসলাম, আজাদ, সাইফুল ইসলাম, ইমরুল হোসেন, সাগর শেখ ও আরাফাত হোসেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এক নারী বাইপাইল থেকে নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর-মহাখালী রুটের একটি বাস সেখানে আসে।
এ সময় হেলপার গন্তব্য জিজ্ঞাসা করলে তিনি নবীনগর যাওয়ার কথা জানান। হেলপার তাঁকে নবীনগরে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলে। ওই নারী তাঁর ভাইকে ফোন করে সুপারভাইজারকে তাঁর গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে দিতে বলেন।
ভিকটিমের ভাই ফোনে সুপারভাইজারকে নবীনগরে নামিয়ে দিতে বললেও তারা কৌশলে ওই নারীকে আব্দুল্লাহপুরের দিকে নিয়ে আসে। আব্দুল্লাহপুরে বাস পৌঁছানোর পর অন্য সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হলেও ওই নারীকে আটকে রাখা হয়। এ সময় তাঁর চিত্কার শুনে র্যাব-১-এর একটি দল ভিকটিমকে উদ্ধার এবং ওই তিনজনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়, তারা ওই নারীকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল। চালক খলিল মিয়া এক বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাস চালালেও তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বাসেরও কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
আরেকজন মেহেদী হাসান বাবু প্রায় ছয় বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাসের সুপারভাইজার। পরস্পর যোগসাজশ করে নারী ও অপরিচিত যাত্রীদের জিম্মি, অপহরণ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে আসছিল ওরা।
এই চক্রের হাতে আগেও অনেক নারী যাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা বিশেষত গ্রাম থেকে আসা তরুণীদের বাসে তোলার পর কৌশলে অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ এবং তার ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে সেগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত।
অজ্ঞান পার্টির তত্পরতা সম্পর্কে লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ, আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া, টঙ্গী-কালীগঞ্জ রুটে এবং গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে বাসে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো রুমাল বিক্রি ও অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে আসছিল।
তিনি বলেন, চক্রের এক সদস্য প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তির পাশের সিটে বসে। এরপর আরেকজন বিক্রেতা সেজে একই বাসে রুমাল নিয়ে ওই যাত্রীর কাছে যায়। চেতনানাশক স্প্রে মেশানো রুমাল পাশে বসা ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য দরদাম করতে করতে ওই যাত্রীর নাকের কাছে ধরে রাখে। দুই থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
সিটে বসে থাকা চক্রের সদস্য তখন তাকে এমনভাবে বসিয়ে রাখে যাতে সবাই মনে করে যে যাত্রী ঘুমিয়ে আছে। এরপর তারা সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে সুবিধামতো জায়গায় নেমে পড়ে। চক্রটি একই কায়দায় শসা, বরই, আচার ও কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক স্প্রে মেশায় বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।