শরণার্থীদের বাংলাদেশে অবস্থানের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাকে স্বীকার করে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে প্রভাব পড়া বাংলাদেশি সম্প্রদায়গুলোর চাহিদা মেটাতে অর্থায়ন করা জরুরি।
ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তর (ইউএসএআইডি) কংগ্রেসের কাছে আগামী অর্থবছরের (২০২০) জন্য যে বাজেট বরাদ্দ চেয়েছে তার ব্যাখ্যায় ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে উপস্থিতির আশঙ্কা করে তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য সাহায্যের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের কমিটিতে উপস্থিত হয়ে তাঁর দপ্তর ও ইউএসএআইডির জন্য চার হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের অনুরোধবিষয়ক শুনানিতে অংশ নেন। এর আগে গত ১১ মার্চ তিনি তাঁর দপ্তর, বৈদেশিক কর্মকাণ্ড ও এসংক্রান্ত কর্মসূচির জন্য বাজেট বরাদ্দ চেয়ে এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত প্রকাশনা ঘেঁটে দেখা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আশঙ্কা করছে যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা শিগগিরই ফিরে যাবে না। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শরণার্থীদের বাংলাদেশে অবস্থানের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাকে স্বীকার করে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে প্রভাব পড়া বাংলাদেশি সম্প্রদায়গুলোর চাহিদা মেটাতে অর্থায়ন করা জরুরি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শরণার্থী’ মর্যাদা না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশই তাদের ‘শরণার্থী’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত নিউ ইয়র্কে গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, অনেক দিনের পুরনো এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বিশদ রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই শুধু এই সংকটের সমাধান হতে পারে বলে চীন বিশ্বাস করে।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লিও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের শিগগিরই সমাধান হচ্ছে না এবং তারা শিগগির ফিরে যাচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক ত্রাণ সহায়তা দপ্তরের পরিচালক অ্যান্দ্রোলা কামিনারাও গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গাদের আরো দীর্ঘ মেয়াদে উপস্থিতির ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, দৈবক্রমে যদি আজ মিয়ানমারে সব কিছু ঠিক হয়ে যায় তবু আগামীকালই রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার প্রস্তাবিত বাজেটে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য ৮১ কোটি ৭৮ লাখ ডলার চেয়েছে। এর ব্যাখ্যায় তারা বলেছে, উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, আফগানিস্তান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক জাতীয় স্বার্থগুলো অর্জনের জন্য ওই অর্থ প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজকে সহযোগিতা, সুশাসন উৎসাহিতকরণ, কৃষি খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়কে সহযোগিতা এবং সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
প্রস্তাবিত বাজেটে ‘আন্তর্জাতিক সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ’ খাতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার তালিকায় আছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল। বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ডলার, যা আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় বেশি।
এ ছাড়া ‘শরণার্থী’ আশ্রয়দাতা দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য কেনিয়া, তুরস্ক, জর্দান ও বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে।
ইউএসএআইডির বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের জন্য দুই কোটি ৮৭ লাখ ডলার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন খাতে ১২ কোটি ২২ লাখ ডলার এবং সন্ত্রাস দমন খাতে ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দ চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।