প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ব্রুনাই সফরকালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সেক্টরে ছয়টি এমওইউ চূড়ান্ত করেছি। বাকি একটি এমওইউ বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগ আশ্বাস পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’ খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুসসালামে তিনদিনের সরকারি সফরে দেশটির উদ্দেশ্যে রোববার ঢাকা ত্যাগ করবেন।
দেশটির সুলতান হাজী হাসানাল বোলকিয়ার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এই সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে স্বাক্ষর হওয়ার জন্য চূড়ান্ত তালিকায় থাকা এমওইউগুলো হচ্ছে– কৃষি, মৎস, পশু সম্পদ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও জ্বালানি খাত।
সফরকালে দেশটির ইসতানা নূরুল ইমানে বায়তুল মেসউরায়ে সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর খুবই সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং জ্বালানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, খাদ্য, আকাশ পথে যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন এবং প্রযুক্তি সেক্টরে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করবে। ব্রুনাই ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টর বিশেষ করে কৃষি ও জ্বালানি সেক্টরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ব্রুনাই। দেশটি ওআইসি এবং আসিয়ানের সদস্য। এই সফরকালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ফলে ব্রুনাই সফরেও এ বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাবে।’
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপত্তা জোন গঠন করার জন্য আসিয়ানে প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পর যাতে নিরাপদ বোধ করে তার জন্য আশিয়ান সদস্য দেশগুলো ওই নিরাপদ অঞ্চল মনিটর করতে পারে।
স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দরশ্রী বেগাওয়ানের ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা। সেখানে তাকে ব্রুনাই দারুসসালেমের ক্রাউন প্রিন্স হাজী আল-মুহতাদী বিল্লাহ স্বাগত জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান শেষে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হবে। ব্রুনাই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন।
সফরের প্রথম দিনে শেখ হাসিনা তার সম্মানে এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের ইন্দেরা সামুদেরা বলরুমে ব্রুনাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। একই দিনে তিনি ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন।
সোমবার সকালে শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন ইস্তানা নূরুল ইমানের চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ ও রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশ-ব্রুনাই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী এম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও ব্রুনাই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে অনুষ্ঠেয় সভায় উপস্থিত থাকবেন।
তিনি জামে আছার মসজিদ পরিদর্শনে যাবেন এবং সেখানে আছরের নামাজ আদায় করবেন। শেখ হাসিনা ইস্তানা নূরুল ইমানে তার সম্মানে সুলতানের দেয়া সরকারি ভোজ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের রাজধানীর জালান কেবাংসানের কূটনৈতিক এলাকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চেনসেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পরে তিনি রাজকীয় রিগালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় বাংলাদেশের উদ্দেশে ব্রুনাই ত্যাগ করবেন এবং ওইদিন সন্ধ্যায় তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা।