ঢাকার মিটফোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওষুধের দোকানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন ঢাকার ওষুধ ব্যবসায়ীরা। পোশাক পরা বাহিনী অভিযানে আসলে ব্যবসায়ীরা ‘ভয় পায়’ উল্লেখ করে মিটফোর্ডসহ সারাদেশে ওষুধের দোকানে র্যাবের অভিযান বন্ধ চান তারা।
সোমবার পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেন। ওষুধের দোকানে র্যাবের এসব অভিযান বন্ধে একজন ব্যবসায়ীকে করজোড় করে অনুরোধ করতে দেখা যায়।
মতবিনিময় সভায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য চলাকালে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান মিটফোর্ডের এক ওষুধ ব্যবসায়ী।
রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যবসায়ীকে মাইক না দেয়া হলেও তিনি মাইক ছাড়াই চিৎকার করে কথা বলতে থাকেন। তিনি বলেন, আমরা মিটফোর্ডে র্যাবের অভিযান চাই না। আমাদের নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর রয়েছে। তারা এবং আমাদের সমিতির লোকজন অভিযান চালাবে। যারা চোর, ডাকাত, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে তারা ওষুধের দোকানে আসুক আমরা চাই না। পেছনে বসা ওষুধ ব্যবসায়ীরা ‘ঠিক ঠিক’ বলে তার এ বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের শাসন ও শোষণ করার জন্য সরকার একটি সংস্থা তৈরি করেছে তার নাম ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। অধিদফতর থেকে আমাদের আইন-কানুন শেখাবে, আমাদের অন্যায় হলে অভিযান চালাবে। দু-একজন অপরাধ করে আর তাদের জন্য গোটা ওষুধ ব্যবসায়ীদের ধরতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন আসে। তারা যখন এই মিটফোর্ডে আসে তখন আমরা ভয় পাই। পুলিশ দেখলেই আমরা ভয় পাই। তাই আমরা চাই ওষুধ প্রশাসন আসুক অভিযানে, কেমিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ আসুক। আপনারা আমাদের মামলা দেন যা খুশি করেন, কিন্তু র্যাবকে ব্যবসায়ীরা ভয় পায়।’ বক্তব্যের এক পর্যায়ে হাত জোড় করে ওষুধের দোকানে র্যাবের অভিযান বন্ধের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এখানে মতবিনিময় করতে এসেছি অন্য কথাবার্তা বলা যাবে না। আপনি বলেন যে আপনি পরিষ্কার, আপনি যদি পরিষ্কার থাকেন তখন যদি কেউ অন্যায়ভাবে আপনাদের ধরে তখন আমরা সেটা দেখব।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি মো. সাদেকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে কোনো ধরনের দুর্নীতি আমরা বরদাশত করব না। আমরা কথা দিচ্ছি নকল, আন-রেজিস্টার্ড এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দোকানে রাখব না। সেগুলো কোম্পানিকে ফেরত দেব। যদি কোনো কোম্পানি ফেরত না নেয় তবে সেসব কোম্পানিকে আমরা জুলাই মাসের দুই তারিখ থেকে বর্জন করব। ওষুধ নিয়ে আমরা অনেক অপমান-অপব্যাখ্যার শিকার হয়েছি। আমরা এগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। আমরা ওষুধ প্রশাসনের আদেশ-নিষেধ মেনে চলব।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গ্রিনরোডে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে একটি ফার্মেসিতে তিন মাস আগে মেয়াদ শেষ হওয়া ওষুধ পাওয়া যায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
অভিযানের শুরুতে একটি ফার্মেসিতে সানম্যান-বারডেম ফার্মার এসবি মেট-৮৫০ নামের একটি ওষুধের বাক্সে দেখা যায়, এর মেয়াদ ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হয়েছে। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ওষুধটি এখনও দোকানে রাখা হয়েছে। এ ধরনের আরও ওষুধ পাওয়া গেছে ফার্মেসিতে।