বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন কারাবন্দি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাঁতের চিকিৎসার জন্য তাকে দন্ত বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শনিবার বেলা দেড়টার পর তাকে কেবিন ব্লক থেকে বের করা হয়। এরপর তাকে একটি মাইক্রোবাসে করে নেয়া হয় শ’ খানেক গজ দূরের আরেকটি ব্লকে দন্ত বিভাগে।
অধ্যাপক ডা. কাজী বিল্লুর রহমানের অধীনে খালেদার দাঁতের চিকিৎসা হবে। তিনি বিএসএমএমইউর ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিফেসিয়াল বিভাগের প্রধান।
এ সময় হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়ার পরনে ছিল গোলাপি রঙের শাড়ি, চোখে ছিল চশমা।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়। এরপর থেকে তিনি এখানে রয়েছেন।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরও ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। তিনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচল করতে ও নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না।
তিনি দাবি করেন, তাকে সব সময় সাহায্য করতে দুইজন লোকের দরকার হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে সম্প্রতি তার জিহ্বায় আলসার হয়েছে। কিছুই খেতে পারছেন না।
তিনি আরও জানান, গত এক সপ্তাহে তার ৪ কেজি ওজন কমেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছেন, দেখলে চিনতে পারবেন না। এটি একটি সতর্কবার্তা। সরকারের কাছে দাবি, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে বা বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তার দুটি দাঁতের অবস্থাও ভয়াবহ। বিষয়টি হাসপাতালের চিকিৎসকদের জানিয়েছি কয়েকবার। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি।
তিনি জানান, ইদানীং ম্যাডামের আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার ব্লাড সুগার ইনসুলিন নেয়ার পরও নামছে না। তিনি ডায়াবেটিসের তিনটা ওষুধ খাচ্ছেন, তারপরও কিছুতেই তা ২০-এর নিচে নামছে না। যার ফলে জিহ্বার আলসার আরও বাড়ছে।
‘আপনারা জানেন যে এ ধরনের রোগ দ্রুত বাড়তে থাকে। আর্থ্রাইটিস, ফ্রোজেন শোল্ডার রোগে তার স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটেছে। তিনি পা সোজা করতে পারেন না। তার কাঁধে সমস্যা। মোটকথা তিনি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ম্যাডামের ব্যাপারটা দলের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পরিবার ও দেশের মানুষও উদ্বিগ্ন। আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তার চিকিৎসা নিয়ে এমন করা হচ্ছে? তারা কি ম্যাডামকে মেরে ফেলতে চায়? এই প্রশ্নগুলো তো মানুষের মধ্যে এসে যাচ্ছে। চিকিৎসা তো তার প্রাপ্য। কিন্তু তাকে চিকিৎসাটাই দেয়া হচ্ছে না। আমরা আরও উন্নত স্পেশালাইজড হাসপাতালে তার চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা খেয়াল করে দেখবেন ৩ সপ্তাহ আগে ম্যাডামের টুথ গ্রান্ডিং করা হয়েছিল। তার দাঁতের সার্পনেসটা কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত ১৫ দিন ধরে গত ৬-৭ তারিখে ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে কল করা হয়েছিল। তারা গত পরশুদিন তাকে দেখেছেন। ‘এ’ ব্লক থেকে কেবিন ব্লকে যেতে ডাক্তার কল দিলে যদি ১০ দিন সময় লাগে তাহলে এই ধরনের রোগীর প্রতি আচরণ কী নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট এ ব্লকের ৪ তলায়। সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে আপনারা সাংবাদিকরা একবার ঘুরে এলে দেখতে পারেন। ম্যাডামের মতো ৭৫ বছরের নেত্রীর কোনো সমস্যা হলে জরুরিভাবে কীভাবে ম্যানেজ করবে। সেখানে কি সুযোগ-সুবিধা আছে?
বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার দাঁতে সুচিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।