ওএসডি হওয়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীরের এক নারীর সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ মুহূর্তের’ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের পর শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। সেই ডিসি এরই মধ্যে প্রত্যাহার হয়েছেন। তিনি রাতের অন্ধকারে গত শনিবার সরকারি বাসভবন ছেড়েছেন।
ওই ভিডিওতে ডিসির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাওয়ার পর আলোচনায় আসেন সেই নারীও।
জেলা প্রশাসন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই নারীর নাম সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। তিনি জামালপুর জেলা প্রশাসন অফিসের গোপনীয় শাখার অফিস সহকারী। সাধনার বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামে।
সেখানে নিঃসন্তান দম্পতি খাজু মিয়া ও কুমকুম বেগমের দত্তক নেওয়া মেয়ে তিনি। রোগের কারণে ছোটবেলায় সাধনার মাথার চুল ও ভ্রু উঠে যায়। তখন থেকেই তিনি মাথায় কৃত্রিম চুল লাগিয়ে নিয়মিত হিজাব ব্যবহার করেন।
একাধিক বিয়ে হয় সাধনার
সাধনার পরিবারের সদস্যরা জানান, গ্রামে থাকতেই সাধনার বাল্যবিয়ে হয় জোনাইল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফরহাদের সঙ্গে। তার স্বামী বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতে। সেই সংসারে এক ছেলে রয়েছে। একপর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না সাধনার। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে ফরহাদের আকস্মিক মৃত্যু হয়।
স্বামীর মৃত্যুর পর পালিত মা-বাবার সঙ্গে জামালপুর শহরের বগাবাইদে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন সাধনা। এরপর থেকেই তার বেপরোয়া চলাফেরা শুরু হয়। স্থানীয় সমাজসেবা অফিসে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার।
এ ঘটনার পর ওই কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে বদলি নিয়ে চলে যান। সেই সম্পর্কের কিছুদিন পর টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন সাধনা। একপর্যায়ে সেই স্বামীর সাথেও ছাড়াছাড়ি হয়।
সম্প্রতি ডিসি অফিসে পিয়ন পদে চাকুরির সুবাদে সাধনা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন ডিসির। অভিযোগ আছে, ডিসি অফিসের কিছু নিয়োগ বাণিজ্যেও এই নারী জড়িত ছিলেন।
ডিসির সঙ্গে যেভাবে পরিচয় সাধনার
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিসি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেওয়ার জন্য ডিসি আহমেদ কবিরের সঙ্গে দেখা করেন।
তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে যা শারীরিক সম্পর্কে রূপ নেয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নিজে ও তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন।
সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামরাটিতে মিনি বেড রুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজ্জসজ্জা করেন। সেই কক্ষেই সাধনা ও ডিসির আপত্তিকর ভিডিও এখন ভাইরাল।
কী ছিল সেই ভিডিওতে?
ওই ভিডিওতে দেখা যাওয়া পুরুষটিকে অনেকেই উল্লেখিত ডিসি বলে চিহ্নিত করেন। এবং যে কক্ষটি দেখা গেছে ভিডিওটিতে, সেটিকে ডিসির কার্যালয় সংলগ্ন খাস কামরা বলে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের অনেক সরকারি দপ্তরেই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাস কামরার বন্দোবস্ত আছে।
ভিডিওর শেষ পর্যায়ে খাস কামরার বিছানায় দুজনকে শুয়েও থাকতে দেখা যায়। এ সময় ভিডিওতে থাকা পুরুষটি সম্পূর্ণ নগ্ন ছিলেন।
ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ শোরগোল তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় সাংবাদিকরা ওই ডিসির কাছে ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্ন করেন।
ওই ডিসি তখন দাবি করেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি তিনি নন। কিন্তু খাস কামরাটি তারই। পরে সেই ভিডিওর জের ধরেই ডিসিকে ওএসডি করা হয়।
কর্মস্থলে এসে জ্ঞান হারালেন সাধনা
ডিসির সঙ্গে সাধনার আপত্তিকর সেই ভিডিও ভাইরাল হয় গত বৃহস্পতিবার। এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল সরকারি ছুটি। গতকাল অফিস খোলা থাকলেও কর্মস্থলে আসেননি সাধনা।
- টাকার বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম কমায় রেকর্ড
- কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের পাশে থাকবেন ট্রাম্প
- অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এরশাদের আসনে উপ-নির্বাচন
ভিডিও প্রকাশের পর আজ সোমবার প্রথম অফিসে আসার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ সময় ওই নারীর হাতে শারীরিক অসুস্থতার কারণে একটি ছুটির আবেদনপত্র দেখা যায়।
আবেদনে অফিস চলাকালীন অসুস্থ বোধ করায় আগামীকাল ২৭ আগস্ট থেকে তিন দিনের ছুটির কথা উল্লেখ করেন ডিসির গোপনীয় শাখার অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ওই নারী। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কেউ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত ডিসির কার্যালয় ত্যাগ করেন তিনি।