বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক হলে অধৈভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ এবং ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ ৫ দফা দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নোটিশও জারি করা হয়েছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষরিত পৃথক পাঁচটি আদেশ শনিবার দুপুরে প্রকাশ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো-
১. আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এখনই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিশ জারি করতে হবে।
২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিশে লেখা থাকবে।
৩. বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিশ জারি করতে হবে। পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিশে উল্লেখ করতে হবে।
৪. বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৫. প্রত্যেক হলের সকল ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিস আসতে হবে।
শনিবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য (ভিসি) চাইলে তাদের পাঁচ দফা দাবি এক ঘণ্টাতেই পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু সেটি যদি না করা হয়, তাহলে ১৪ অক্টোবর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হতে দেয়া হবে না।
- আরও পড়ুন >> এরপর আন্দোলন করার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে?
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।