একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বর্তমানে ৩০ জন আসামি দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব রায় দেন।
সব কটি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন। তবে ইতিমধ্যে একটি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে।
আপিল নিষ্পত্তি বিলম্বের কারণে তাদের কনডেম সেলের জীবন কত দীর্ঘ হবে সেই বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আপিলের রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে ফয়সালা হবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে কি হবে না। তাই ফাঁসির আদেশ মাথায় নিয়ে বাঁচা-মরার আশা-নিরাশায় প্রহর কাটছে ওই ৩০ আসামির।
আপিল কত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে সে বিষয়ে কোনো নির্ধারিত দিন নেই। যদিও আইনে বলা আছে আপিল ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, কিন্তু সেই বিধানটা আদেশমূলক নয়, নির্দেশনামূলক।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে থাকা ৩০ আসামির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আপিল চলছে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের। পাঁচ বছর ধরে কনডেম সেলে আপিল জীবন কাটছে তার।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সর্বশেষ রায় হয়েছে চলতি বছরের গত ২৭ আগস্ট। ওই দিন মো. আব্দুস সামাদ ও মো. রনজু মিয়ার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ইতিমধ্যে তারা আপিল করেছেন। এ সময়ের মধ্যে দুই, তিন , চার বছর ধরে আপিলে আছেন অনেকে।
মানবাধিকার অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পেয়ে বর্তমানে কনডেম সেলে থাকা আসামিরা হলেন: এটিএম আজহারুল ইসলাম (জামায়াত নেতা) মাওলানা আব্দুস সোবহান (জামায়াত নেতা), সৈয়দ মো. কায়সার (জাতীয় পার্টির নেতা), মোবারক হোসেন (আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা), অব্দুল জব্বার, মাহিদুর রহমান, সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, খান মো. আকরাম হোসেন, ফোরকান মল্লিক, ওবায়দুল হক (তাহের), আতাউর রহমান ননী, মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া), মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, সামসুদ্দিন আহম্মেদ, শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলী, মো. সাখাওয়াত হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মো. মোসলেম প্রধান, মো. আব্দুল লতিফ, ইউনুছ আহমেদ, আমীর আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, মো. জয়নুল আবেীদন, মো. আব্দুল কুদ্দুস, হামিদুর রহমান আজাদ, এ গনি ওরফে এ গনি হাওলাদার, মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, মো. আকমল আলী তালুকদার, মো. ইসহাক সিকদার, মো. আব্দুল কুদ্দুস ও মো. মাহবুবুর রহমান।
এদের মধ্যে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলটি গত ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। বাকিদের মধ্যে অপর জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুস সোবহান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টি নেতা সৈয়দ মো. কায়সার ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোবারক হোসেনের রিভিউ নিষ্পত্তির কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। এখনো শুনানির পর্যায়ে রয়েছে বাকি ২৬ জনের আপিল।
আইনজ্ঞদের ভাষ্য, আপিলের পর একটা সংক্ষিপ্ত রায় হয়। আরেকটা হয় পূর্ণাঙ্গ রায়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফাইট কপি হাতে পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে আসামিকে রিভিউ পিটিশন দায়ের করতে হয়। রিভিউ পিটিশন ফাইল করলে নিয়ম অনুযায়ী কার্যতালিকায় এসে শুনানি হয়।
রিভিউ ডিসমিস হলে আদেশের কপি ট্রাইব্যুনাল হয়ে কারা কর্তৃপক্ষের হাতে চলে যায়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ রায়ের কপি আসামিকে পড়ে শোনান। এরপর আসামিকে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবে কী চাইবে না সেটি আসামির বিষয়।
আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষকে আদালতে সারসংক্ষেপ জমা দিতে হবে। সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার পরে নিয়ম অনুযায়ী আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে। কার্যতালিকায় আসার পর আপিল বিভাগ কর্তৃক তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। ওই তারিখে শুনানি শুরু হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আপিল বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিলের শুনানি তো হচ্ছে। একটা নিষ্পত্তি হচ্ছে তো আরেকটা চলছে।
আপিল শুনানিতে বিলম্ব হচ্ছে কি-না প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, না না অ্যাপিলেট ডিভিশনকে তো সব মামলাই করতে হবে, তাই না। খালি একটা করলেই তো চলবে না। সব মামলাই করতে হবে। সব মামলাই করছেন তারা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলাদাভাবে কী আর করব। খালি যুদ্ধাপরাধীদের মামলা করলেই তো চলবে না। অন্যান্য সব মামলাও করতে হবে।