‘আইএস টুপি ভিড়ের মধ্যে কেউ দিয়েছে’

আদালত প্রতিবেদক

আইএসের টুপি পরে আদালতে আসামি

আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিন আদালত প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের টুপি মাথায় কীভাবে এলো এ সম্পর্কে আদালতকে জানিয়েছেন জঙ্গি রিগ্যান।

তিনি জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যে কে যেন তাকে টুপিটি দিয়েছেন। কালেমা খচিত হওয়ায় তার ভালো লেগে যায়। এজন্য তিনি তা মাথায় দিয়েছেন। পরে গাড়িতে তার থেকে নিয়ে অপর জঙ্গিও মাথায় দেন।

universel cardiac hospital

আজ মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানকে রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ জঙ্গি আস্তানার মামলায় শুনানির সময় এ কথা বলেন।

গত ২৭ নভেম্বর আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিন দণ্ডিত আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানের মাথায় দেখা যায় একটি কালো টুপি, সেখানে আইএসের পতাকার ঢঙে আরবি লেখা। পরে আসামিদের কারাগারে নেওয়ার সময় প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর মাথাতেও দেখা যায় একই রকমের টুপি।

তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনায় জঙ্গির মাথায় টুপি কোথায় থেকে এলো এটা নিয়ে পুলিশ ও কারা অধিদপ্তরের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। কারা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে, টুপি কারাগার থেকে আসেনি। যদিও পুলিশের দাবি কারাগার থেকেই এসেছে টুপি।

মঙ্গলবার ‘জাহাজ বিল্ডিং’ জঙ্গি আস্তানার মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করা হয় চার্জশিটভুক্ত আসামিদের। এর মধ্যে রিগ্যানও একজন।

ওই মামলায় রিগ্যানসহ সাত আসামিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নিচ তলায় হাজতখানায় এনে রাখা হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে হাজতখানা থেকে আসামিদের হালি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় রায় প্রদানকারী ওই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালেই এ মামলা বিচারাধীন।

ট্রাইব্যুনালে আসামিদের তোলার পর বিচারক মামলাটিতে পলাতক থাকা আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিটের সম্পত্তি ক্রোকের বিষয়ে এদিন প্রতিবেদন আসায় বিচারক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।

এরপর বিচারক মজিবুর রহমান কাঠগড়ায় থাকা আসামি রিগ্যানকে হলি আটিজান মামলার রায়ের দিন তার মাথায় আইএসের মনোগ্রাম সম্বলিত টুপি তিনি কোথায় পেলেন মর্মে প্রশ্ন করেন। উত্তরে রিগ্যান বলেন, ‘ভিড়ের মধ্যে কেউ দিয়েছে।’

কে দিয়েছে বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাকে চিনি না।’

এরপর বিচারক ‘কেন নিলেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘টুপিতে আরবিতে কালেমা শাহাদাত লেখা ছিল। তাই নিয়ে ভালো লাগায় পরি।’

এরপর বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আর কাউকে ওই টুপি দিয়েছেন কি না?’

জবাবে রিগ্যান বলেন, ‘আর কাউকে দিইনি। তবে আমাকে দেওয়া টুপিই প্রিজনভ্যানে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী পরেছিল।’

প্রসঙ্গত, কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ জঙ্গি অস্তানার এই মামলায় গত ১১ এপ্রিল পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল হয়। এরপর গত ১৮ জুলাই ট্রাইব্যুনাল চার্জশিট আমলে নিয়ে পলাতক আজাদুল কবিরাজের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত ২৮ অক্টোবর ওই আসামির সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়।

মামলার অপর ৮ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান রিগ্যান (২১), আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ (২০), শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান (২৫), মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন (৩০), হাদিসুর রহমান সাগর (৪০), আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে নাসরুল্লা হক ওরফে মুসাফির ওরফে জয় ওরফে কুলমেন (৩৩), সালাহ্ উদ্দিন কামরান (৩০), আব্দুর রউফ প্রধান (৬৩) ও নব্য জেএমবির অধ্যাতিক নেতা সংগঠনটির একাংশের আমির মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর (৬০)। 

আসামিমের মধ্যে রিগ্যান, র‌্যাশ, সাগর, মামুন, খালেদ ও সবুর খান রায় হওয়া গুলশানের হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ বাড়িতে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানে ৯ সন্দেহভাজন জঙ্গি মারা যায়। রাকিবুল হাসান রিগ্যান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়। একজন পালিয়ে যায়।

এই ঘটনায় ওই বছর ২৭ জুলাই রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক মো. শাহজাহান আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায়  এ মামলা করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে