প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এবার আন্দোলনের আশা বিএনপিতে!

বিশেষ প্রতিবেদক

বিএনপি
ফাইল ছবি

বিএনপির নেতাকর্মীরা কিছুদিন ধরেই আশায় ছিলেন- দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে (গত বৃহস্পতিবার) মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল না হওয়া এবং জামিনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় সেই প্রত্যাশায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা ওই ঘটনায় হতাশ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ‘সরকারের হস্তক্ষেপে’ শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন না-ও হতে পারে। তাই ধাপে ধাপে তারা সরকার পতনের আন্দোলন তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। একই সঙ্গে আইনগত লড়াইও দলটি অব্যাহত রাখবে। তবে হঠাৎ বড় ধরনের বা ‘হটকারী’ কোনো কর্মসূচি বিএনপি দেবে না।

universel cardiac hospital

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন তারা হতে দেবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনের কথা ভাবছি। তিনি বলেন, একতরফা এবং রাতের আঁধারে অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের পর প্রমাণ হয়েছে, এ সরকারকে না সরাতে পারলে জনগণ আর ভোট দিতে পারবে না। পাশাপাশি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিও মিলবে না। অতএব সরকার পতনই সব কিছুর একমাত্র সমাধান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি সরকার পতন আন্দোলনও বিএনপি চালিয়ে যাবে। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনোবল এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা অপশাসনে জনগণ অতিষ্ঠ। তাই আন্দোলনে সফলতার ব্যাপারে আমরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আশাবাদী।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আন্দোলনের জন্য বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মুখিয়ে আছেন। কারণ তাঁদের চেতনা জেগেছে যে এই সরকারকে সরাতে না পারলে দেশেরও ভবিষ্যৎ নেই তাঁদেরও ভবিষ্যৎ নেই। গত কয়েক দিনে সুপ্রিম কোর্টে এবং এর বাইরে যে প্রতিবাদ হয়েছে তা নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ততায় হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১২ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ দুই দিনের কর্মসূচি প্রণয়ন ছাড়াও ওই বৈঠকে বলা হয়, যা করার চলতি শুকনো মৌসুমের মধ্যেই করতে হবে। রমজান, ঈদ ও বর্ষাকালে সাধারণত আন্দোলন হয় না বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতারা। তবে আগামী ১২ ডিসেম্বর জামিন শুনানিতে কী হয় তা দেখে কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত না করতে পারলে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র করা যাবে না- এমন একটি মনোভাব তৈরি হয়েছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে। ফলে দলকে আন্দোলনমুখী দেখতে চান কর্মীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপিকে তারা আন্দোলনের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সাবেক ছাত্রদলনেতা খায়রুল কবীর খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এখন আর আগের মতো হতাশা নেই। বরং তারা এখন যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের আন্দোলন চান। তিনি জানান, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত বলে আন্দোলনের জন্য এখন চাপ দিচ্ছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরের বছর মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপি ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তবে সরকারের পতন হয়নি। বরং হাজার হাজার মামলায় দলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হলে সাংগঠনিকভাবে কাবু হয়ে পড়ে বিএনপি। আর ওই সব ঘটনার কারণেই আন্দোলন নিয়ে দলের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দেয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হলেও আন্দোলনে যায়নি দলটি। তখন অবশ্য দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা ছিল যে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। তা ছাড়া ‘ভোট বিপ্লবে’র মাধ্যমে সরকারের পতন হবে বলেও সব শেষ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তারা মনে করেছিলেন। কিন্তু কারাগারে খালেদা জিয়ার এক বছর দশ মাস এবং সব শেষ গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বিএনপির সেই আশাও ভঙ্গ হতে চলেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে