শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত স্যার ফজলে হাসান আবেদ

মত ও পথ প্রতিবেদক

ফজলে হাসান আবেদ
স্যার ফজলে হাসান আবেদ । ফাইল ছবি

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বনানীর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরে শায়িত হলেন বরেণ্য এই উদ্যোক্তা। দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর তার দাফন কাজ শেষ হয়।

বনানী কবরস্থানের এ ব্লকের ১৫ রোডে আয়শা আবেদের কবর ছিল। সেখানে সকাল থেকে ৭ জন কবর খোঁড়ার কাজ করেন। পরে সেখানে ফজলে হাসান আবেদকে সমাহিত করা হয়।

universel cardiac hospital

এর আগে বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা হয় আবেদের। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ঢল নামে। পরে লাশবাহী গাড়ি রওনা হয় বনানী কবরস্থানের দিকে।

এর আগে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ফজলে হাসান আবেদের লাশ আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে সেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে মেজর আশিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে উপ সামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ শ্রদ্ধা জানান।

এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্যার আবেদকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।

আর্মি স্টেডিয়ামে ফজলে হাসান আবেদকে শ্রদ্ধা জানান নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসও। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পরে বিভিন্ন পোশার মানুষজন এই গুণীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। দুপুর সোয়া ১২ টা পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধা নিবেদন চলে।

ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮০ সালে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে