রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাশিয়ার সমর্থন চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মত ও পথ প্রতিবেদক

এ কে আবদুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ফাইল ছবি

সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে রাশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সোভিয়েত অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (সাব)-এর ৫ম এশিয়ান কনফারেন্স অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এই সমর্থন চান।

universel cardiac hospital

ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাশিয়া আমাদের সাহায্য করতে পারে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি রাশিয়ান ফেডারেশনকে বলব, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন।’

রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার প্রথমদিকে রাশিয়া মিয়ানমারকে জোরালো সমর্থন দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের মতো রাশিয়াও জাতিসংঘে মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় মিয়ানমারের প্রতি আগের সেই প্রকাশ্যে সমর্থন থেকে অনেকটা সরে আসে রাশিয়া। তবে দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আলেকচেন্ডার ইগনাটভ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের নীতিকেই সমর্থন করে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারকে রাশিয়ার সমর্থন দেওয়ার ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু পরোক্ষ যুক্ততা রয়েছে। তাছাড়া এই ইস্যুতে চীনকেই সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকার পরও মিয়ানমারের আন্তরিকতায় সেটা কার্যকর বা দৃশ্যমান হচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা চাই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে তাদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরে যাক। আমাদের দিক থেকে সব প্রস্তুতি থাকার পরও মিয়ানমার ডিলে দেরি করছে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে কয়েকবার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশে ফেরানো নিয়ে ছলচাতুরি করে আসছে মিয়ানমার। বারবার আশ্বাস দিয়ে একজন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না দেশটি।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। আগেও বিভিন্ন সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে।

মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও এখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার জন্য অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া রাশিয়ানদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য খুব চমৎকার একটি অঞ্চল। এখানে রাশিয়া বিনিয়োগ করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। কারণ, এখানে যেকোনো পণ্য তৈরি করলে তার মার্কেট প্রস্তুত রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করলে উইন উইন সিচুয়েশন হয়।‘

সোভিয়েত অ্যালামনাই এসোসিয়েশন বাংলাদেশের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে ৬০জন বিদেশি অতিথিসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত চার শতাধিক বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে