ইরাকে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানির জানাজা পড়ালেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। আজ সোমবার তেহরানে কুদস ফোর্সের এই প্রধানের মরদহের প্রতি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা শেষে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি-সহ অন্যান্য বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের প্রধানের মরদেহ তেহরানে পৌঁছায় সোমবার সকালে। ইরানের শীর্ষ এই জেনারেলের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানের রাস্তায় নামে লাখো জনতা ঢল।
প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবিরোধী প্রখ্যাত কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানের রাস্তা লাখ লাখ মানুষে পরিপূর্ণ। ৩ জানুয়ারি (শুক্রবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের স্থপতি হিসেবে পরিচিত কুদস ফোর্সের শীর্ষ এই জেনারেলকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়।
সোমবার সকালে যখন জেনারেল সোলেইমানির মরদেহ ইনকিলাব চত্বরে পৌঁছায় তখন লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় তেহরান। পরে সেখান থেকে তার মরদেহ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিহত এই জেনারেলের জানাজা নামাজের নেতৃত্ব দেন।
ইরানিদের কাছে জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত এই জেনারেলের ছবি দেখা যায় শোকাহত মানুষের হাতে। জানাজা অনুষ্ঠানে নিহত এই জেনারেলের মেয়ে জয়নব সোলেইমানি বলেন, তার বাবার মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের জন্য কালো অধ্যায় ডেকে আনবে। উন্মত্ত ট্রাম্প যেন মনে না করেন যে, আমার বাবার মৃত্যুর মাধ্যমে সবকিছু শেষ হয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সাবেক প্রধান মহসেন রেজায়ী কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার সকালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে লাখ লাখ নারী, পুরুষ জেনারেল সোলেইমানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানের ইনকিলাব চত্বরে সমবেত হন। এ সময় অনেকের হাতে জেনারেল সোলেইমানির ছবি ও দেশটির পতাকা দেখা যায়। অনেকের হাতে ছিল আমেরিকা নিপাত যাক লেখা প্ল্যাকার্ড।
জেনারেল সোলেইমানির এই জানাজা অনুষ্ঠান দেশটির সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। টেলিভিশনের পর্দায় বাম পাশে ওপরে দেখা শোকের প্রতীক; যা দেশটিতে বিরল শ্রদ্ধা নিবেদন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন। কুদস ফোর্সের প্রধানকে হারিয়ে দেশটিতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় হামলার হুমকি পাল্টা হুমকির মাঝে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে রোববার বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
পারমাণবিক চুক্তির শর্ত না মানার ঘোষণা দিয়ে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে তেহরান। ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের শর্তে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির ওই পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইরান শর্ত মানছে না অভিযোগ করে ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
জেনারেল সুলেইমানি হত্যাকাণ্ড ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে চিরবৈরী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তেহরান এবং ওয়াশিংটনের মাঝে নতুন যুদ্ধের দামামা বাজছে।
সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, প্রেস টিভি।