করোনাভাইরাস: আজ ফিরবে চীনে আটকা পড়া ৩৪১ বাংলাদেশি

মত ও পথ রিপোর্ট

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফাইল ছবি

চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আটকা পড়া ৩৪১ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনতে বিমান পাঠানো হচ্ছে। আজ শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট তাদেরকে আনতে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ৩৪১ জন যাত্রী নিয়ে মধ্যরাতেই ঢাকায় পৌঁছাবে বিমানটি। দেশে ফিরিয়ে আনার পর তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্প এবং উত্তরার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে তাদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

এরই মধ্যে বেইজিংয়ের বাংলাদেশে দূতাবাস উহানের বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যাগের কথা জানিয়ে প্রস্তুতির জন্য নানা নিদের্শনা দিয়েছে। খবর পেয়ে আগ্রহী বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

চীনের হুবেই প্রদেশের জিংমিংয়ে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী টুম্পা প্রামানিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জেনেছি উহান থেকে বাঙালি শিক্ষার্থীদের ফেরাতে একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেইজিংয়ের বাংলাদেশে দূতাবাস প্রায় ৩৭০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমি উহানের পাশেই জিংমেন সিটিতে আছি। ইতোমধ্যে অ্যাম্বাসি থেকে দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা ৯ জন বাঙালি শিক্ষার্থী সব দিক বিবেচনা করে যাচ্ছি না।

টুম্পা বলেন, করোনার চিকিৎসা বাংলাদেশ থেকে চীনেই ভালো হবে। হুবেই প্রদেশে যে শহরে আমি আছি সে শহরে উহানের মতো ঝুঁকি নেই। সব ধরনের সতর্কতা মেনেই এখানে চলাচল করছি। দেশে গিয়ে ১৪ দিনের জন্য আইসোলেটেড থাকাটা একটু কষ্টকর ব্যাপার। সব মিলিয়ে আমি মনে করি এখানে অবস্থান কারাটাই আমার জন্য এখন শ্রেয়। কারণ, আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতি খুব শিগগিরই উন্নতির দিকে যাবে।

তিনি জানান, এমন দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ দোটানায় পড়েছেন।

আশঙ্কা প্রকাশ করে টুম্পা জানান, দেশে ফিরে গেলে তাদের মাধ্যমে স্বজনদের মধ্যেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই তারা আপাতত চীনে অবস্থানকেই শ্রেয় মনে করছেন।

উহানের সেন্ট্রাল চায়না বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আবদুল্লাহ আল হাফিজ জানান, আমরা যারা চীনে আটকে গিয়েছিলাম, তারা দেশে ফেরার জন্য উইচ্যাটে একটি গ্রুপ খুলেছিলাম। সেখানে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল। এই গ্রুপের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার আবেদন তুলে ধরি। প্রথম দিকে কর্মকর্তারা ১৪ দিনের মাথায় দেশে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিলেও বৃহস্পতিবার রাতেই তারা আমাদের একদিন পরেই দেশে ফিরিয়ে আনার কথাটা নিশ্চিত করেন।

এদিকে, দেশে ফেরার ব্যাপারে উইচ্যাট গ্রুপে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা এটিকে রেসকিউ ফ্লাইট উল্লেখ করে সবাইকে লাগেজের আকার ছোট রাখার নির্দেশ দিয়ে বার্তা প্রদান করেন। এছাড়া তারা নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমায়েতের স্থান, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের তালিকাও প্রকাশ করেন গ্রুপটিতে। দেশে ফিরিয়ে নেয়ার সময় এগিয়ে আসায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

উহানে অবস্থানরত পিএইচডি গবেষক শামীমা সুলতানা বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে, আমরা দেশে ফিরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের বন্দী আর আতঙ্কের জীবন থেকে মুক্তি পেলাম। দুই মেয়ে নিয়ে এতদিন যে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কেটেছে তা থেকে আমাদের উদ্ধার করায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানাই।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ)- ২০২০ এর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে ৩৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চান। আমরা তো তাদের আনতে রেডি (প্রস্তুত)। যখনই ওরা আসতে চাইবে এবং চাইনিজ সরকার এলাও (অনুমতি) করবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসবো। শুনেছি কোনো কোনো দেশ তাদের কূটনীতিকদের নিয়ে গেছে, সেই ফাঁকে যদি অন্য কাউকে নিয়ে যায় সেটা জানি না।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।

এ পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩ জনে। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে