বইমেলায় বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বইয়ে মেতেছে তরুণরা

ডেস্ক রিপোর্ট

বইমেলা
ফাইল ছবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে তরুণদের পাঠের রুচি বদলেছে। গল্প-উপন্যাসের চেয়ে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী কিংবা ই-কমার্সের বইয়ের দিকেই ঝোঁক বেশি তাদের। সমাজ পরিবর্তনের এই দিকটি ভাবাচ্ছে লেখক-প্রকাশকদেরকেও।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর লেখক সালমান ফরিদ বলেন, বিজ্ঞান কল্পকাহিনী মূলত বিজ্ঞানমনস্ক সৃষ্টিশীল চিন্তার জগতকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। তবে এই শাখার লেখক সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। তবে অল্পসংখ্যক সিরিয়াস ফিকশন লেখকদের প্রচেষ্টায় এটি বাংলা সাহিত্যে একটি শক্ত জায়গা করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। তরুণ পাঠকরাই এর প্রমাণ।

সাইন্স ফিকশন বইয়ের স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরা জানান, তরুণদের এক বিরাট অংশের পাঠাভ্যাস তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে ই-কমার্স মোটিভেশনাল এবং সায়েন্স ফিকশনের বই। ফলে প্রতিবারের গ্রন্থমেলায় সবধরনের বইয়ের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যায় সায়েন্স ফিকশন বইগুলো। এবারও বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর তরুণদের একটা বিরাট অংশ এই বই কিনতে আসে। ফলে গল্প-উপন্যাসের চেয়ে সাইন্স ফিকশন এর বইগুলো অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।

বুধবার বিকালে দেখা যায়, একদল স্কুল শিক্ষার্থীদের। তাদের আগ্রহ বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর দিকে।

কিশোরী তাবাসসুম জাফর ইকবালের একটি বই কিনেছেন। তিনি বলেন, জাফর ইকবাল স্যারের বই সবসময়ই প্রিয়। এরকম আরো অনেক লেখকরা যদি আসেন তাহলে আমি সবার বই কিনব। কল্পকাহিনীর বই গুলো বেশ ভালো লাগে আমার।

স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে সায়েন্সফিকশন বইয়ের ক্রেতাদের অতিমাত্রায় ভিড়ই প্রমাণ করে বরাবরের মতো এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে সায়েন্সফিকশন বই। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ পাঠকদের বড় অংশের ভালোলাগা ও ভালোবাসার জায়গা দখল করে আছে সায়েন্সফিকশন।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর বইয়ের প্রকাশকেরা প্রায় প্রত্যেকেই বললেন, সায়েন্সফিকশন বইয়ের বিক্রির কাটতি থাকলেও বইয়ের চাহিদা যে হারে বাড়ছে সে হারে লেখক বাড়ছে না। সায়েন্সফিকশনের লেখক বাড়লে প্রায় সব প্রকাশনা সংস্থাই এর সুফল পাবে বলেও মনে করেন তারা।

এবারের মেলায়ও জাফর ইকবালের বইয়ের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আরো বেশি বেশি করে লেখকের আবির্ভাব ঘটলে জাফর ইকবালের ওপর চাপ কম পড়বে মন্তব্য প্রকাশকদের।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত মেলায় সায়েন্স ফিকশন এসেছে ৪৬টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মোশতাক আহমেদের ‘নিঃসঙ্গ গিরি’, ‘নিহির ভালবাসা’, ‘গিটো’, ‘রিরি ও লাল গ্রহের লাল প্রাণী’, বিপ্লব দেবের ‘ক্লিটি ভাইরাস’, কথাপ্রকাশ থেকে মুহম্মদ মনিরুল হুদার লেখা ‘ছোটন’, কাকলী প্রকাশনী প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের রহস্যময় ‘ব্লাক হোল’, বাসিয়া প্রকাশনী থেকে সালমান ফরিদের ‘রেবুলু জিরো জিরো ওয়ান’, তাম্রলিপি প্রকাশিত নাসিম সাহনিকের ‘ল্যাংগুয়েজ হান্টার’, মুনির হাসানের ‘ময়াল’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে শফিকুল ইসলামের ‘ট্রাইলিন’, অন্বয় প্রকাশ থেকে এসেছে শাহেদ ইকবালের ‘অন্ধ মাকড়শা’, পিয়াল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের গুলশান-ই-ইয়াসমীনের ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী’, অহমদ পাবলিশিং হাউসের বদরুল আলমের ‘এক্স ওয়ার্ল্ড’, সমগ্র প্রকাশন থেকে মো. মিন্টু হোসেনের ‘এলিয়েন’, কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে মোশতাক আহমেদের ‘ইডিন’, অনিন্দ্য থেকে এসেছে অরুণ কুমার বিশ্বাসের ‘জোহানেসবার্গে জিঘাংসা!’, কলি প্রকাশনী থেকে দীপু মাহমুদের ‘হারাকিরি’ ইত্যাদি।

নতুন বই

মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৬টি। এরমধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে জালাল ফিরোজের ‘বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান’, সাতভাই চম্পা প্রকাশনী এনেছে আমিনুর রহমান সুলতানের ‘লোকগানের জনকের মুখ’, রাত্রি প্রকাশনী এনেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প’, অনুপম প্রকাশনী এনেছে ‘সৌমেন সাহার ‘কোয়ান্টাম মেশিন’, অনন্যা এনেছে সুভাষ সিংহ রায়ের ‘জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’, মোস্তফা কামালের ‘স্বপ্নবাজ’, রকিব হাসানের ‘ইনকা দেবতার গুপ্তধন’, কথা প্রকাশ এনেছে মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘ইতিহাস পাঠ ১ ও ২’, চারুলিপি প্রকাশনী এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘কিশোর সমগ্র’, জলকথা প্রকাশ থেকে আরিফ বখতিয়ার সম্পাদিত ছড়াগ্রন্থ ‘এলেবেলে একশ ছড়া’ ও জুম্মি নাহদিয়ার ভ্রমণগ্রন্থ ‘ব্যাকপ্যাকে পৃথিবী’ প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

মেলামঞ্চে আলোচনা

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জালাল ফিরোজ রচিত বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ডালেম চন্দ্র বর্মণ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং সাব্বীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘শাসনতন্ত্রহীন জাতি নোঙর-বিহীন নৌকার মতো।’ এ উপলব্ধি থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি নবীন রাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নে তিনি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘রক্তের অক্ষরে এই সংবিধান রচিত’। গণপরিষদ গঠন, এর বিন্যাস এবং সংবিধানের মূল রূপরেখার উপর বঙ্গবন্ধু সেসব সিদ্ধান্তধর্মী বক্তব্য রাখেন, এ বিষয়ে সরকার-দলীয় ও বিরোধী সদস্যদের বক্তব্য, মত, পরামর্শ, গণপরিষদের সদস্যবৃন্দের পর্যালোচনা, জনগণের অধিকার সংরক্ষণের নানাদিক, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ ও চারটি মৌলিক স্তরের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার নিদের্শ দেশ তা সুলিখিতভাবে এ গ্রন্থে রয়েছে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া-পাওয়া, জাতির জীবনে প্রতিটি সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রস্ফুটিত হয়েছে এ সংবিধানে। স্বল্প সময়ে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনদের আন্তরিক তৎপরতা, সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে একটি সদ্যস্বাধীন দেশে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অনন্যসাধারণ ঘটনা।

গ্রন্থের লেখক জালাল ফিরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক এই গ্রন্থে কিছু অনালোচিত বিষয়ে আলোকপাত এবং নতুন তথ্য উদ্ঘাটনের প্রয়াস পেয়েছি। পাঠক এই বই থেকে বঙ্গবন্ধুর শাসনতান্ত্রিক ভাবনার পরিচয় পাবেন বলে আশা করি।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, লেখক যথেষ্ট পরিশ্রম করে গবেষণামূলক দৃষ্টিতে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের বন্ধু। তাঁর দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের। সেকারণে বাংলাদেশের সংবিধানে মেহনতি মানুষের কথা, সংগ্রামী মানুষের কথা বিবৃত হয়েছে, যা সমকালীন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

ছড়াপাঠের আসরে ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার আসলাম সানী, আলম তালুকদার, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, আনজীর লিটন, রহীম শাহ, ফারুক হোসেন। আজ ছিল হাসান আব্দুল্লাহ’র পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠন’-এর পরিবেশনা।

সংগীত পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল, শাহীন সামাদ, ইয়াসমিন মুশতারী, বর্ণালী সরকার, উত্তম কুমার রায়, তালুকদার জান্নাত হোসেন, ফারহানা শিরিন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে