দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামলেও আজ মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে বড় উত্থান হয়েছে। লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিটেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে কয়েক দিন ধরেই বিশ্ব শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারও প্রায় অর্ধমাস ধরে নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোববার বিকেলে প্রথম বাংলাদেশে তিনজন করোনা আক্রান্তের তথ্য আসে। এর প্রেক্ষিতে পুনর্বিন্যাস করা হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রোগ্রাম।
এরপর সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিনভর থাকে সেই ধারা। ফলে বড় ধরনের ধস নামে শেয়ারবাজারে। ডিএসইতে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমে ৩৫২টির। আর একটির দাম অপরিবর্তিত থাকে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮ পয়েন্টে নেমে যায়। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৮৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ্ ৬৯ পয়েন্ট কমে ৯২৯ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
তবে আজ মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম ১০ মিনিটের লেনদেন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ্ ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৯৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১টির। আর ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ৪৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টির।
এদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্ব শেয়ারবাজারে বড় ধস দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ, এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া- প্রতিটি অঞ্চলের শেয়ারবাজারে বিরাট ধস দেখা গেছে সোমবার।
বিশ্ব পুঁজিবাজারে সোমবার দিনভর এই অবস্থার পর দিনটিকে ‘ব্ল্যাক মানডে’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে দাম পড়ে যায় প্রায় সাত শতাংশ। এই বিরাট ধসের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেখানে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ারবাজারেও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। কেউ কেউ শেয়ারবাজারে যা ঘটছে তাকে ‘রক্তগঙ্গা’ বয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা গিয়েছিল, তারপর এ রকম বিপর্যয় আর শেয়ারবাজারে দেখা যায়নি বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধসের পর ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয় কিছুক্ষণের জন্য। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার সব বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জে সারাদিন ধরে একের পর এক ধস নেমেছে।
ইউরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে যখন লেনদেন শুরু হয়, সেখানেও দেখা যায় একই চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বড় সূচকে বিরাট ধস নামে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অর্থনৈতিক সংবাদদাতা অ্যান্ড্রু ওয়াকার বলছেন, এই অস্থিরতার পেছনে আছে করোনা ভাইরাস।