চলে গেলেন কবি-লোক গবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকী

মত ও পথ প্রতিবেদক

ড. আশরাফ সিদ্দিকী
ড. আশরাফ সিদ্দিকী। ফাইল ছবি

সাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দীর্ঘ এক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। 

universel cardiac hospital

১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলে জন্ম নেওয়া ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, লোক ঐতিহ্য গবেষক এবং শিশু সাহিত্যিক। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তিনি তাদের একজন।

১৯৭৬ থেকে ছয় বছর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

৪০-এর দশকের শুরুতে প্রতিশ্রুতিময় কবি হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ। তার সাহিত্যিক জীবনে তিনি রচনা করেছেন পাঁচশ’র অধিক কবিতা। বাংলার লোকঐতিহ্য নিয়ে করেছেন গভীর গবেষণা। তিনি রচনা করেছেন ৭৫টি গ্রন্থ এবং অসংখ্য প্রবন্ধ।

১৯৪৮ সালে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাষ্টার’ কবিতা  রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণমানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ ছোটগল্প লেখক হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছোটগল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার পায়।

বাংলার মৌখিক লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা বইগুলো- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলী ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিণ এশিয়ার লোক সাহিত্যে গবেষণায় মৌলিক বই হিসেব বিবেচিত হয়।

‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি এন্ড আদার ষ্টোরিজ’ ইত্যাদি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডরে পৌছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনূদিত হয়। তার ৭০দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ আজও তরুণ পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।

ড. আশরাফ সিদ্দিকী পড়াশোনা করেছেন শান্তিনিকেতন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে তিনি আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহের এএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক, ডিস্ট্রিকট গ্যাজেটিয়ারের প্রধান সম্পাদক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন তিনি।

কবির মরদেহ আত্মীয় ও গুণগ্রাহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত তার ধানমন্ডীর বাসভবনে রাখা হবে (আশরাফ সিদ্দিকী রুপকথা, বাড়ি ৬৪, সড়ক: ৭-এ, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা)। তার জানাজা ধানমন্ডি শাহী ইদগাহ মসজিদে বাদ যোহর অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে