দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারসহ নানামুখী চাপের মধ্যে থাকা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন ছিল, যেকোনো সময় জোট ছাড়তে পারে প্রায় ২০ বছর ধরে বিএনপি জোটের সঙ্গে থাকা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই দলটি।
আজ বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আমেলার বৈঠকের পর জোট ছাড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া।
জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জোট ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রেস রিলিজে বিস্তারিত থাকবে।
তবে জমিয়তের এই অংশটি বিএনপি জোট ছাড়লেও মনছুরুল হাসান রায়পুরী ও গোলাম মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বাধীন জমিয়তের একাংশ এখনো জোটের সঙ্গেই রয়েছে।
সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে হেফাজত ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় জমিয়তের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন— জুনায়েদ আল হাবিব, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মনির হোসেন কাসেমী, খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী ও মোহাম্মদ উল্লাহ জামী। আরও বেশ কয়েকজন নেতা আছেন গ্রেফতারের তালিকায়। জমিয়তের নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি মাদ্রাসা নিয়েও আছে ঝামেলা। এসব চাপ সামাল দিতেই মূলত দলটি বিএনপি জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এখন দুই ভাগে বিভক্ত। উভয় অংশ বিএনপি-জোটের শরিক। ‘ভারপ্রাপ্ত’ হয়ে একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)।
এই অংশের সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন গত বছর মারা গেলে মাওলানা জিয়াউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর গত বছর নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হন মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী। তিনি হেফাজতের নাশকতার মামলায় গত এপ্রিল থেকে কারাগারে আছেন। আফেন্দীর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া।
জানা গেছে, দলের নেতাদের মুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করার চিন্তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জমিয়ত। এতদিন পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মত থাকলেও মঙ্গলবারের আমেলার বৈঠকে জোট ছাড়ার বিষয়ে সবাই একমত হন।
নির্বাচন কমিশনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নিবন্ধন নং ২৩। ২০০১ সালে সংগঠনটি ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গী হিসেবে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটির দুজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এর আগে শায়খুল হাদিস হিসেবে পরিচিত আজিজুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি জোট ত্যাগ করে।