পর্নো ব্যবসা ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ নজরুল রাজের, নেপথ্যে ‘শর্টগান সোহেল’

ক্রীড়া ডেস্ক

সোহেল-নজরুল ইসলাম রাজ

বলিউড নায়িকা শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার মতো ঢাকার কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পর্নো ভিডিও তৈরি করতেন বলে ধারণা করছে র‌্যাবের কর্মকর্তারা। গ্রেফতারের পর তার মোবাইলে অসংখ্য পর্নো ভিডিও পেয়েছেন তারা। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে এসব ভিডিও রাজ বিদেশে রফতানি করতেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে রাজের সব অপকর্মের অন্যতম প্রধান সহযোগী ও নেপথ্যে মদতদাতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে শর্টগান সোহেল ওরফে সোহেল শাহরিয়ারকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাংশের দখল নেওয়া এই সোহেল শাহরিয়ার দীর্ঘদিন কানাডায় পালিয়ে থাকার পর বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরেছেন। রাজ ও সোহেল মিলে ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসা করতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নজরুল ইসলাম রাজের মোবাইলে অনেক পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে। এছাড়া সে অল্প বয়সী তরুণীদের ব্যবহার করে অনৈতিক ও অবৈধভাবে অর্থ আয় করতেন। তার এসব অবৈধ আয় বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তার সহযোগী হিসেবে আমরা বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, অভিযানের সময় রাজের বনানীর ৭ নম্বর সড়কের ৪১ নম্বর বাসায় গিয়ে আভিযানিক দলের সদস্যরা বিস্মিত হয়ে যান। তার বাসাটি স্টুডিও বা প্রোডাকশন হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এর একটি কক্ষে বিকৃত যৌনাচারের এমন কিছু উপকরণ পাওয়া গেছে; যাতে স্পষ্ট বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে পর্নো ভিডিও ধারণ করতেন। এজন্য তার কার্যালয়ের কম্পিউটারটিও জব্দ করা হয়েছে। এসব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করার পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, রাজ ও শর্টগান সোহেল মিলে শোবিজ মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেইলিং করে অবৈধ অর্থ আয় করতেন। সোহেল শাহরিয়ার কানাডায় থাকাকালীন ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে কীভাবে পর্নো ব্যবসা করা যায় সেই খোঁজ জানান রাজকে। সোহেল শাহরিয়ারের মাধ্যমেই রাজ আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছেন। একইসঙ্গে রাজ ঠিকাদারি ব্যবসায় নেমে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সহযোগিতা পেতে সোহেলকে ব্যবহার করতেন। অন্যদিকে রাজের মাধ্যমেই শোবিজ মিডিয়ার উঠতি বয়সী তরুণীদের ব্যবহার করতেন শর্টগান সোহেল। এজন্য রাজের নেতৃত্বে তারা ‘ফ্লিল্ম ক্লাব’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছেন। ।

সূত্র জানায়, খুলনা থেকে ঢাকায় এসে নজরুল ইসলাম রাজ একজন প্রবীণ রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় প্রথমে ঠিকাদারিসহ ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন। এরপর শোবিজ মিডিয়ায় অর্থ লগ্নি শুরু করেন। মিডিয়ায় মূলত তার টার্গেট ছিল মডেল হওয়ার আশায় গ্রাম থেকে আসা তরুণীদের অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা। এছাড়া পার্টির আয়োজন করে শিল্পপতি ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গকে ‘এসকর্ট’ সহযোগিতা করে বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়া।

সূত্র আরও জানায়, বছর দুয়েক আগে ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগ নেতা সম্রাট ও খালেদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করার পর কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের অন্যতম সহযোগী শর্টগান সোহেল। জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৪ মার্চ শাহজাহানপুর এলাকার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি কাওসার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সে। তার বিরুদ্ধে আরও অন্তত দুটি হত্যা মামলা রয়েছে। সম্রাট ও খালেদ গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে সে মতিঝিল-শাহজানপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজি শুরু করে। সম্প্রতি মতিঝিলের ক্রীড়া পরিষদের ২৫টি টেন্ডারের মধ্যে একাধিক কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন সোহেল শাহরিয়ার। এসব কাজে তিনি কখনও রাজের মাধ্যমে উঠতি মডেল ব্যবহার করেছেন, আবার কখনও অস্ত্রের ভয় দেখিয়েও বাগিয়ে নিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, একটি বিশেষ জেলার পরিচয় দেওয়া রাজের সঙ্গে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। দেশের বাইরে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই রাজ-সোহেলের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নায়িকা ও মডেলদের ‘বিশেষ সঙ্গ’ নিতেন।

শেয়ার করুন