বিএনপির নতুন জোটের উদ্যোগে ‘বাধা’ তারেকের নেতৃত্ব

হাসান শান্তনু

বিএনপি
ফাইল ছবি

বিএনপির নতুন ঐক্য গড়ার উদ্যোগ শুরুতেই পড়লো ‘আপত্তি-অনাপত্তির’ কবলে। জোটের নেতৃত্বে থাকবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান। দলটির সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিক’ বৈঠকে বসা দলগুলোর ভাষ্য ভিন্ন। তারেককে নিয়ে বিদেশি একাধিক মহলে এখনো কিছু প্রশ্ন, আপত্তি রয়ে গেছে। তাঁর নেতৃত্বের প্রতি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাংশের সায় নেই। জোটের নেতৃত্বে তিনি থাকলে কোনো কোনো বিদেশি মহলের সমর্থন পাওয়া না-ও যেতে পারে।

আগামী নির্বাচনে আর্ন্তজাতিক সমর্থন পাওয়া না গেলে জোট গড়ার দামদর মেলাতে পারছে না দলগুলো। তাদের অভিযোগ, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেকের নেতৃত্বে গত প্রায় চার বছরে বিএনপির তৃণমূলজুড়ে গণ্ডগোল, নিজেদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, খুনোখুনি, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বহিষ্কার-উল্টা বহিষ্কার চলছে বেশ।

universel cardiac hospital

বিএনপির জোট গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ একনেতার ভাষ্যে এখনই ‘হতাশা’। সরকারবিরোধি যতো দলকে জোটে ভেড়ানোর পরিকল্পনা করছে দল, সবাইকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কী না। জোটে তারেকের নেতৃত্ব মানতে তারা নারাজ। আরেক ‘বাধা’ জামায়াত। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন হারিয়েছে দলটি। বিতর্ক থাকলেও জামায়াতকে জোটে রাখবে বিএনপি। আপাতত মুখ ফুটে বলবে না, তবে কৌশলে।

কৌশলটা ধরে ফেলেছে, বা স্পষ্ট ওই দলগুলোর কাছে। ‘আনুষ্ঠানিক’ আলোচনার আগেই তারা বলে দিলো- জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে ‘জোটে যাব না’। বিএনপির জামায়াত ‘ত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা’ চায় তারা। জোট হলে আন্দোলনের কর্মসূচিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গটি বাদ রাখারও দাবি তাদের। কয়েকটি দলের অবশ্য তারেক, জামায়াত বিষয়ে আপত্তি নেই।

আলাপ হয় বিএনপির জোটের উদ্যোক্তা, দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের সঙ্গে। শর্ত- তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মত ও পথকে তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধি অবস্থানে থাকা, ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করা, অনুসন্ধান কমিটির কাছে নামের প্রস্তাব না পাঠানো দলগুলোকে নিয়ে জোট করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দুটি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আর প্রায় ২০ টি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। জোটের নেতৃত্বে থাকছেন তারেক, এটা জেনে আপত্তি জানায় বেশিরভাগ দল।’

তিনি বলেন, ‘জোটে নেতৃত্ব ও জামায়াত- দুটি বিষয়েই কিছুটা ধোঁয়াশা রেখে আলোচনা চালিয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দলগুলোর বক্তব্য- এটা বিএনপির দলীয় ইস্যু। তবে এর মানে এমন নয় যে, দলগুলো বিএনপির জোটে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আলোচনা চলছে। আবার সরকারবিরোধি অবস্থানে আছে বলেই কোনো দল বিএনপির জোটে আসবে, এমনও নয়।’

সম্ভাব্য জোটের নেতৃত্বে তারেক, এটা স্পষ্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তৃব্যে। তিনি মত ও পথকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁর নেতৃত্বে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। মানুষের কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।’

পরবর্তী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। গত ৩ জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি। স্থায়ী কমিটি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সরকারবিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আলোচনা, বৈঠক করে বৃহৎ জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠক দুটিতে।

এর আলোকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম ‘আনুষ্ঠানিক’ বৈঠক হয়, নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। গত রোববার বিএনপি রুদ্ধধার বৈঠক করে ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এলডিপি) সঙ্গে। বৈঠক শেষে মূল বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কোনো দলের নেতা। যোগাযোগ করলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মত ও পথকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা এক জায়গায় বসলে সেখানে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

শেয়ার করুন