অর্ধেক নয়, শতভাগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সংলাপে অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, সংলাপে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের তেমন আগ্রহ নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের টেলিফোন পেয়ে তাঁরা অংশ নিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর সিইসি বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দেন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ করার চিন্তা আছে। বিষয়গুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সিইসি সম্পর্কে সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা এখনো পর্যন্ত শক্ত কোনো অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেননি। বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘তাঁর (সিইসি) মেরুদণ্ড শক্ত’ বলে মন্তব্য করেন। ডা. জাফরুল্লাহ সরকারের গুণগ্রাহী না হয়েও সিইসির প্রশংসা করেন। নতুন ইসিকে ঘিরে মানুষের মনে এক ধরনের আস্থার জন্ম হচ্ছে, এমন আভাস নানাভাবে মিলছে। কারো কারো প্রশ্ন, সিইসি ‘অতিরিক্ত কিছু বলছেন কী না!’ সদ্য বিদায়ী সিইসির বিরুদ্ধে অতি কথনের অভিযোগ ছিল।

হাবিবুল আউয়াল দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘জটিলতার’ সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠ না ছাড়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধে জেলেনস্কি আত্মসমর্পণ না করে মাঠে থেকে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনি মাঠ না ছেড়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহবান জানান সিইসি। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য ঠিকভাবে নেয়নি ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।

অনানুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মানটিটসকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিইসির বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চান। আনুষ্ঠানিক না হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সিইসির ভেবেচিন্তে মন্তব্য করা উচিত, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত। তিনি গতকাল বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে শতভাগ সফলতা কখনো সম্ভব নয়। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই তা সফল বলে ধরে নেওয়া যায়।’ কে কী বললেন, সেটা মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে- আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা।

সিইসির ওই বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সুযোগ আছে। কারণ, দেশবাসীর প্রত্যাশা শতভাগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অর্ধেক কেন, শতভাগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে বাধা কোথায়? ইসি কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে, তার পথনকশা ইসিকেই সাজাতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আস্থা অর্জন করতে না পারলে ইসিতে দায়িত্ব পালন সহজ হবে না। ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক দল যুক্ত না হওয়ায় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই যাত্রা শুরু হয়েছে। আগের কমিশন অনেক বিতর্ক তৈরি করে বিদায় নিয়েছে। কাজেই নতুন কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। বেশি কথা বলে অহেতুক বিতর্ক তৈরির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না বলে আমরা মনে করি। কমিশন আসলে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, এটা তাদের কার্যক্রমে প্রমাণ করতে হবে।

শেয়ার করুন