টানা দুই দিন দফায় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে কেউ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি, কেউবা কমদামে পণ্য কেনা নিয়ে সংঘর্ষ বলে ধারণা করলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে। তারপর ব্যবসায়ীদের নিজেদের বিতণ্ডায় শিক্ষার্থীদের ডেকে আনলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে তাদেরকে ফাঁদে ফেলে এভাবে মারপিট করা হলো কেন? এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের আক্রমণ থেকে আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় ৷ ঢাকা কলেজের চিকিৎসক, ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আহতদের অধিকাংশই ইটের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে যাওয়া, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেলের আঘাত, মাথা ফাটা, হাত-পা ভাঙা ছিল বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক নূরুন নাহারসহ একাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন বলেও গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। এ সময় আক্রমণের শিকার হওয়া একজন পথচারীর পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। যা খুবই দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, গভীর রাতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে এলোপাতাড়ি টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। তখন তারা কলেজের বিভিন্ন বহুতল ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে প্রতিরোধ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ নির্বিচারে রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এতে বহু ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশনের কোনো দরকার ছিল কি-না তা-ও তদন্ত করা হোক।
ঢাকা কলেজসহ ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেশের অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐতিহাসিকভাবে ঐতিহ্য বহন করে আসছে। মূলত একই এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকায় নানা সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতা হলেও তা দ্রুত সময়ে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও গত দুদিনে সংগঠিত ঘটনাটি উপযুক্ত সময়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই জটিল হয়ে উঠেছে বলে আমরা মনে করছি। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর কোনো পক্ষ হামলা করবে- এমন অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা যেন আমাদেরকে আর দেখতে না হয়।