অর্থনীতির প্রধান খলনায়ক আর্থিক খাতের দুর্বলতা: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অর্থনীতির প্রধান খলনায়ক হলো আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এর কারণ, দীর্ঘদিনের জমে থাকা সংস্কার না হওয়া। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এখন দেখা যাচ্ছে। আর্থিক খাতের অযত্নের কারণে আমরা এগুতে পারছি না।’

আজ বৃহস্পতিবার সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই আলাপচারিতা হয়। আলাপচারিতার শিরোনাম ছিল ‘বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় একটি উত্তরণকালীন নীতি সমঝোতা খসড়া’।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বর্তমান সংকট রোগের উপসর্গ মাত্র। রোগ ভিন্ন জায়গায়। সেটি হলো সংস্কার না হওয়ায়। তিনি বলেন, আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় সরকারকে ভর্তুকি কমাতে হচ্ছে। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গরিব মানুষষে সুরক্ষা দিতে ভর্তুকি দেওয়া বেশি প্রয়োজন ছিল।

এই আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলায় দুই থেকে তিন বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এই নীতি সমঝোতায় নীতি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। সেগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা; উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখা এবং গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। এই নীতি প্রণয়ন ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তাহলে আগামীতে যদি রাজনৈতিক টানাপোড়েন হয়, তখনো আর্থিক খাতকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।

বর্তমান সংকটে শ্রমিক শ্রেণিকে সুরক্ষা দিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে একটি জাতীয় মজুরি কমিশন গঠনের সময় হয়ে গেছে। তৈরি পোশাকশ্রমিকদের এখন মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া উচিত। বেশি বিনিময় হারের সুবিধা পাচ্ছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। তাই এর একটি অংশ পোশাকশ্রমিকদের পাওয়া উচিত। কারণ, বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

নীতিনির্ধারকেরা ক্ষুণ্ন মনে স্বীকার করছেন যে অর্থনীতি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে—এই মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকেরা অপরিপক্ব ও বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছেন।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পূর্বশত হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কেউ যদি বলেন, আইএমএফের শর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মানে, দেশ নীতি সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কোনো সরকারের জন্য এটি সম্মানজনক নয়। তবে এই ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রাক্–পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

শেয়ার করুন