রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে বিএনপি। আজ সমাবেশের শেষ দিকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। বিএনপির ১০ দফা দাবিতে যা যা রয়েছে-
১. বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮ খ, গ ও ঘ এর আলোকে দল নিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী সব মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। দেশে সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাঁধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার যাবে না।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ জনসেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
৭. নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
আজ বেলা ১১টা থেকে সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল এ সমাবেশ হওয়ার ঘোষণার পর থেকেই গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। কাল রাতের মধ্যেই মাঠটি প্রায় ভরে যায়। আজকের সমাবেশের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা।