সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা মনে করেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর গ্রহণযোগ্যতা ও সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটি ‘একতরফা’ জাতীয় নির্বাচনের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
‘সংবিধান সংশোধনের (অপ) রাজনীতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। প্রবন্ধে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল, একটি মীমাংসিত ও জনপ্রিয় বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শর্তহীনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়, যা ছিল স্বার্থপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক মনে করেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত রায়ের ফলে জনগণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ভেঙে গেছে। এই ক্ষতি কত দিন চলবে, কেউ জানে না। তাঁর মতে, অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে ও অবাস্তব যুক্তির ভিত্তিতে তাড়াহুড়ো করে ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত রায় দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক বলেন, যে কোনো সংবিধান সংশোধনপ্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের যুক্ত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ক্ষমতাসীনেরাই এটি নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৪ সাল থেকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মূল সংকট।