পুতিনের বক্তব্যে কি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে গেল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভ্লাদিমির পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করেছেন। গতকাল মঙ্গলবারের ভাষণে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে তিনি তার কৌশল বদলাবেন না। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তিনি পশ্চিমাদের দায়ী করলেন। খবর বিবিসির।

অবশ্য পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করছে না। তার ভাষণের কয়েক ঘণ্টা পর রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, পরমাণু চুক্তির প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল। ইতিপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার আগে তারা তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখবেন।

২০১০ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত নিউ স্টার্ট চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ সীমিত রাখার পাশাপাশি দুই পক্ষ একে অন্যের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ ছিল। পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করলে তারাও পরীক্ষা চালাবেন। তার এই বক্তব্যের ফলে স্নায়ুযুদ্ধের পর বন্ধ থাকা পারমাণবিক পরীক্ষা আবার শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিশ্ব বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মস্কোর চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি গ্রিস সফরকালে বলেন, ‘রাশিয়া কী করছে, আমরা তা সতর্কভাবে দেখছি।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন ‘ভালো সমাধান খুঁজে বের করতে’ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পোল্যান্ড সফরকালে নিউ স্টার্ট চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে পুতিনের ইউক্রেনে হামলার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি ‘যতই খারাপ পরিস্থিতি আসুক’, ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে পুতিন এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘোষণা দিলেন, যাতে ইউক্রেন যুদ্ধ এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এর আগে ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহে মন্তব্য করেছিলেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিলে ‘ভয়াবহ সমস্যা’ তৈরি হবে।

রাশিয়া গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায়। একই সময়ে রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভের দিকে যাত্রা শুরু করে। তখন মনে হচ্ছিল, রুশ বাহিনীর হাতে কিয়েভের পতন সময়ের ব্যাপারমাত্র। কিন্তু পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউক্রেন বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ফিরে যায় রাশিয়ার বাহিনী।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে স্পষ্ট বিভোজন সামনে নিয়ে এসেছে। এই যুদ্ধের কারণে ন্যাটো জোটও নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা পুতিনের জন্য এখন বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে এই জোট।

রুশ প্রেসিডেন্ট গতকাল মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা প্রথমে পরীক্ষা চালাব না। যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষা চালালে আমরাও পরীক্ষা চালাব।’

শেয়ার করুন