জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগামী জুনের মধ্যে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে। না হলে আগামী নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভোটারেরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এই ঘোষণা দিয়েছে। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় একটি মশাল মিছিল বের করে সংগঠনটি। এতে মাতুয়া মহাসংঘের সদস্যরাও অংশ নেন।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন এবং সমতলের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তবে এসব প্রতিশ্রুতির একটিও এখনও বাস্তবায়ন করেনি ক্ষমতাসীন দল।
সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পর ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায় বিপর্যস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের জায়গা–জমি দখল, বিগ্রহ ভাঙচুর, দেবত্তোর সম্পত্তি দখল, নানাভাবে তাদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর দশ মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, আমরা অনেক–বেশি শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সরকারি দল গত নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা চার বছর চলে গেলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জুনের মাঝামাঝি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে জুলাই মাসের মাঝামাঝির পর ঢাকাসহ সারাদেশে আমরণ অনশন কর্মসূচি করব। আমরণ কর্মসূচি চলা পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগে আটটি বিভাগীয় সমাবেশ করব। সমাবেশ থেকে আমাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরব। এরপরও দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভোট কেন্দ্রে যাবে কি না, তা তাদেরকে ভেবে দেখতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, ধর্মীয় রাষ্ট্র করার জন্য ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দেয়নি। এই দেশকে আফগানিস্তান হতে দেওয়া হবে না।
সারাদেশে এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দাবি উঠছে উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথা হলো সব নাগরিকের সমঅধিকার, সমমর্যাদা ও সুযোগের সমতা। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গেলে সব জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে কারণে মনে করি এসব দাবি বাস্তবায়ন করা উচিত।
আওয়ামী লীগ সরকারের এসব দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগী ভূমিকা বলার আগেই নেওয়া উচিত ছিল। এই অবহেলা কেন হলো তা যাচাই করে দেখা দরকার বলে মনে করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, জুনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে এবারের নির্বাচনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভোট আপনারা (আওয়ামী লীগ) পাবেন না। আমরা ভোট কেন্দ্রে যাব না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সঞ্জীব দ্রং, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, শ্যামল কুমার রায় প্রমুখ।