পুরো আসন নয়, অনিয়মের কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিল করা যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন চলাকালে যে কোনো মুহূর্তে এক বা একাধিক কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) সংশোধনের খসড়ায় এই বিধান রাখা হয়েছে। তাতে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল বা স্থগিতের বিষয়টি নেই।

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিওর সংশোধনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

universel cardiac hospital

তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, খসড়ায় আরও কিছু সংশোধন, মতামতসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবারও মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে আরপিও সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পেশিশক্তি বন্ধ করার জন্য বা যে কোনো কারণে নির্বাচন চলাকালে যে কোনো মুহূর্তে এক বা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করা যাবে। এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন এর আগে গাইবান্ধায় একটি আসনের উপনির্বাচনে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করে ইসি।

তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে মন্ত্রিসভা যে বিষয়গুলো যৌক্তিক বলে মনে করেছে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়ক হবে বলে মনে করেছে, সেগুলোই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে এক বা একাধিক। এখানে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়নি।

বিদ্যমান আইনে শুধু রিটার্নিং কর্মকর্তা কারও মনোনয়নপত্র বাতিল করলে তার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরপিওর যে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হলেও সে বিষয়ে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তির মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হলো, কিন্তু কেউ মনে করলেন সেটি সঠিক হয়নি, তখন চাইলে সে বিষয়ে আপিল করা যাবে।

এতো দিন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাতদিন আগে ব্যাংকঋণ ও বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধের অনুলিপি জমা দিতে হতো। না হলে মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হতো। আরপিওর প্রস্তাবিত সংশোধনীতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে টিআইএন সনদ এবং কতো টাকা আয়কর জমা দেওয়া হয়েছে, তার রসিদ জমা দিতে হবে। আগে এগুলো ছিল না।

প্রস্তাবিত আরপিও সংশোধনীতে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র বিষয়গুলো (নারী নেতৃত্বসহ) পূরণের সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হলেও অনিয়মের প্রমাণ পেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোট বাতিল করার ক্ষমতা পাচ্ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল। তবে তা খসড়া সংশোধনীতে নেই।

এতে জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন। একই ব্যক্তি একাধিক আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারবেন বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন