রাজধানীতে একইদিনে সমাবেশ করলো বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগ। একইদিনের দুটি সমাবেশ ঘিরে রাজধানীবাসীর মধ্যে এক ধরনের ‘উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার’ তৈরি হয়েছিলো। মাত্র দুই কিলোমিটারেরও কম ব্যবধানে এতো বড় দুটি সমাবেশে সংঘাত এড়ানো যাবে কী না, তা নিয়ে কারো কারো ছিলো শঙ্কা। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো আজ শুক্রবারে দুইপক্ষের সমাবেশ।
গত দুইদিন ধরে বিএনপির সমাবেশস্থল ও ডিএমপির নির্দেশনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নাটকীয়তা দেখা যায়। ঢাকার নয়াপল্টন থেকে বায়তুল মোকাররম, দূরত্ব মাত্র ১.৭ কিলোমিটারের মতো। এতো কম দূরত্বে দুটি বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে ভয়ও তৈরি করে। আজ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ আয়োজন করে শান্তি সমাবেশের। অন্যদিকে নয়াপল্টনে ‘সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে’ সমাবেশ করে বিএনপি।
এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন, এর ওপর সমাবেশ ঘিরে আজ সকাল থেকে রাজধানীর সড়কের যান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব কম মানুষই আজ সড়কে বের হয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন, তারাও অনেকটাই ভীত ছিলেন। তাদেরকে শিকার হতে হয় যানজটের।
কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল করিম জানান, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আজ সকালে তার প্রসব ব্যথা ওঠে। গাড়ি ঠিক করার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করি। কিন্তু কোনো গাড়িই কাকরাইলের দিকে যেতে চাচ্ছিলো না। কারণ, সেখানে বিএনপির সমাবেশ। পরে অনেক কাকুতি-মিনতি করে একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করি। তবে এখানে এসে দেখি প্রচুর মানুষ। কোনোভাবেই প্রথমে গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করানো যাচ্ছিল না।
বিএনপির সমাবেশ দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই দলটির নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুপুর থেকেই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে হাজারো মানুষের ঢল নামে। গুলিস্তান জিরো পয়েন্টকে কেন্দ্র করে চারপাশের এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা তিনটার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে এলে সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে আগত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপিকে আর কোনো ধরনের অরাজকতা করতে দেওয়া যাবে না। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যকে প্রতিহত করতে তারা রাজপথে থাকবেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট করেন, তারা বর্তমান সরকারকে আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে রাজপথে থাকবেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিএনপির একদফা প্রতিহত করতে তারা মাঠে প্রস্তুত।
দুই দলের সমাবেশের মাঝে পল্টন মোড় এলাকায় দুইপক্ষের নেতাকর্মীদের অবস্থান ছিলো অত্যন্ত নিকটে। তবে সেখানে কোনো পক্ষেরই উস্কানিমূলক তেমন কোনো কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। ফলে সংঘাত ছাড়াই পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের সরকারের শাসনামলে দেশে এমন রাজনৈতিক দৃশ্য প্রায় বিরল।