জাতীয় নির্বাচন এলেই ঘুরেফিরে আলোচনায় আসে কালো টাকার বিষয়টি। যদিও নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে সবসময়ই তাগিদ দেন অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কিন্তু সে তাগিদ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় না। প্রার্থী মনোনয়ন থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে কালো টাকা। এমনকি মাঠ পর্যায়ে পেশিশক্তির উত্থানেরও অন্যতম নিয়ামক কালো টাকা। যার ফলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যায়।
এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঠিক একইভাবে আলোচনায় আসছে কালো টাকার বিষয়টি। কেননা এবারের নির্বাচনেও অবৈধ পথে টাকার পাহাড় গড়ে তোলা বহু ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে হাজির হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ঐসব প্রার্থী বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিতরণ করে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ভোটারদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নির্বাচন আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায়।
আমরা মনে করি, নির্বাচনী আইনে যে পরিমাণ টাকা ব্যয়ের বিধান রয়েছে, সেটা যেন হয়, নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে। রঙিন পোস্টার করা যাবে না। ট্রান্সপোর্ট দিয়ে ভোটারদের আনা নেওয়া করা যাবে না। রাতের অন্ধকারে টাকা লেনদেন নিষিদ্ধ। এমন নিয়মগুলো কাগজে-কলমে না রেখে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটকে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা বৃদ্ধি আবশ্যক। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে ব্যাংকগুলোতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে নজরদারি জোরদার, বিশেষ করে যেসকল আসনে কালো টাকা ব্যবহারের ঝুঁকি বেশি রয়েছে, সেসব আসনগুলোতে নির্বাচনের চার দিন পূর্বে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ সকল প্রকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পেশিশক্তির উত্থান ও সহিংসতা ঠেকাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক: সংসদ সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।