ছুটির দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জেলায় নিহত ১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক দুর্ঘটনা
প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকাসহ ৭ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ছুটির দিনে সড়কে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকায় দুই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক নারী ও তিন পুরুষ। এছাড়া নওগাঁ, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে সাতটি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১০ জনের। তাদের মধ্যে একজন নারী ও নয়জন পুরুষ।

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় রাজধানীর রামপুরায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার পর ট্রাকের চাপায় চালকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত অটোরিকশা চালক মো. রাজিব হাওলাদারের (৩৮) বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রিয়ামতি গ্রামে। তিনি খিলগাঁওয়ের সিপাহিবাগ এলাকায় স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। ট্রাকটি আটকের পাশাপাশি সেটির চালক মাইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।

নিহত রাজিবের বড় ভাই মিজান হাওলাদারের জানান, তার ভাই বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে রামপুরা বাজার এলাকা থেকে অটোরিকশা চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি পিকআপ পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি উল্টে পড়ে। ওইসময় আরেকটি কভার্ডভ্যান চাপা দিলে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা রাজিবকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান।

এদিকে সকাল সোয়া ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের সামনে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। সকাল ৮টার দিকে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন বলে মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাযহারুল ইসলাম জানান, নিহতরা হলেন, বরিশাল উজিরপুরের আব্দুর রহমান (৬৫), তার মেয়ে শারমিন (৩৮), তার স্বামী রিয়াজুল (৪৮)। শারমিনের মেয়ে মিষ্টি (১১) এবং অটোরিকশার চালকও এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। আব্দুর রহমানের ছেলে তানভীর আহমেদ ঢাকায় ব্যবসা করেন, মাতুয়াইলেই তার বাসা।

ছয় জেলায় ১০ জনের প্রাণহানি

নওগাঁ: পত্নীতলা উপজেলায় সকাল ৮টার দিকে উপজেলার মধুইল করমজা মোড়ে পত্নীতলা-সাপাহার সড়কে অটোরিকশা উল্টে সড়কে পড়ার পর ট্রাক্টরের ধাক্কায় এক নারীসহ দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। নিহতরা হলেন- পত্নীতলা উপজেলার মহারণ্ডি গ্রামের জুয়েল হোসেনের স্ত্রী বুলবুলি খাতুন (৪২) ও একই গ্রামের ফারুক হোসেন (৬০)। এ ঘটনায় আহত ফজলুর রহমানকে (৪০) পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়িও একই এলাকায়।

পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ চৌধুরী বলেন, মধুইল করমজা মোড়ে যাত্রীবাহী অটোরিকশাটি চাকার সমস্যার কারণে উল্টে গেলে যাত্রীরা সড়কে পড়ে যান। এ সময় বালুবোঝাই একটি ট্রাক্টর তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই বুলবুলি নিহত হন। এসময় ট্রাক্টরটিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। পরে আহত অবস্থায় দুজনকে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।

কুষ্টিয়া: পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। মিরপুর উপজেলায় বেপরোয়া গতির অবৈধ স্টিয়ারিং ট্রলির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোরের মৃত্যু হয়। আর দৌলতপুরে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় মহসীন হোসেন (৩৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের আজমতপুর ও লক্ষীধরদিয়া গ্রামের মাঝামাঝি হাওয়াখালি মাঠের মাঝে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরের নাম সিয়াম (১৭)। সে একই এলাকার চক ধুবইল গ্রামের দাউদের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, পার্শ্ববর্তী সাতগাছি গ্রামের বকুল বেপরোয়া গতিতে স্টিয়ারিং গাড়ি চালিয়ে স্থানীয় একটি ভাটায় যাচ্ছিল। রাস্তায় হাওয়াখালি মাঠ এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল আরোহী কিশোর সিয়ামকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন সিয়ামকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠালে পথেই তার মৃত্যু হয়। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দৌলতপুরে ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় মহসীন হোসেন (৩৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতপুর-ভেড়ামারা সড়কের আল্লাহর দরগা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মহসীন হোসেন ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার মৃত খতিবুর রহমানের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি বিড়ি কারখানায় কাজ করতেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, রাতে কারখানার ডিউটি শেষে মোটরসাইকেল যোগে দৌলতপুর থেকে ভেড়ামারায় নিজ বাড়ী ফিরছিলেন মহসীন আলী। এসময় পেছন দিক থেকে আসা একটি ড্রাম ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে মারাত্মকভাবে আহত হন মহসীন হোসেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তার মৃত্যু হয়।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নীলফামারী: সৈয়দপুরে মাইক্রোবাসের চাপায় এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের দুজন আরোহী। এর মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. লিমন (২২)। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জের রাধানগরের আবদুল গফুরের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢেলাপীর থেকে মাইক্রোবাসটি সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে যাচ্ছিল। পথে বাইপাস সড়কের মরিয়ম চক্ষু হাসপাতালের কাছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে লিমনকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই রাগিব ও মোটরসাইকেলের অপর আরোহী ইমরান গুরুতর আহত হন। রাগিবকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান বলেন, মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: অটোরিকশার ধাক্কায় এক সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। সকালে সদর উপজেলার রামজীবনপুর কাচারিমোড় বেতবাড়িয়া রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম আব্দুর রাকিব (১৮)। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউপির নাককাটিতলা এলাকার রুবেল আলীর ছেলে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল আটটার দিকে আব্দুর রাকিব সাইকেলে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে আসছিলো। পথিমধ্যে সদর উপজেলার রামজীবনপুর কাচারিমোড় বেতবাড়িয়া এলাকায় একটি অটোরিকশার ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। অটোরিকশাটি আটক করা গেলেও সেটির চালক পলাতক।

মাদারীপুর: বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলা শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুতর আহত হন দুইজন। সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন জনি ফরাজী ও নাঈম ফরাজী।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা এ ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, নিহত নাঈম ধুরাইল ইউনিয়নের চাছার গ্রামের জালাল ফরাজী এবং জনি ফরাজী একই গ্রামের জহির ফরাজীর ছেলে। নিহত দুইজনেই জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে বাসের চাপায় সাওন মোল্লা (১৩) নামে এক পথচারী কিশোর নিহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চন্দ্র দিঘলিয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে আসার পথে টুঙ্গিপাড়া পরিবহনের দ্রুতগামী একটি বাস সাওনকে চাপা দেয়। এসময় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সাওন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতানশাহী তেবাড়িয়া গ্রামের মাহাবুর মোল্লার ছেলে।

শেয়ার করুন