সাড়ে চার মাস পর শিক্ষা প্রশাসনের বড় পদগুলোতে বদলি ও পদায়ন করা হলেও বেশির ভাগ পদেই সিনিয়রদের রেখে জুনিয়রদের পদায়ন করায় পুরো শিক্ষা ক্যাডারেই অসন্তোষের পারদ চড়েছে।
ভালো পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্তরাও রয়েছেন। পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ ছড়ালেও বদলি নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ তেমন একটা ঘটেনি।
সূত্র মতে, গত ২৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ১৮ কর্মকর্তাকে ওএসডি করে। একই দিন আলাদা আদেশে ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নও দেওয়া হয়।
জানা যায়, পরিচালকের মতো বড় বড় পদে শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদায়ন দেওয়া হয়েছে। অথচ সপ্তম থেকে দ্বাদশ ব্যাচের প্রায় দেড় হাজার সিনিয়র কর্মকর্তা রয়েছেন। এখন মাউশি অধিদপ্তরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কাজের জন্য জুনিয়রদের দ্বারস্থ হতে হবে।
নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা ক্যাডারের এক অধ্যাপক গণমাধ্যমকে বলেন, যাঁরা এখন ভালো পদায়ন পেয়েছেন, তাঁরা মূলত বাড়ৈ সিন্ডিকেটের লোক। তাঁদের অন্য যাঁরা এখনো ঢাকার বাইরে আছেন, তাঁরাও শিগগিরই প্রশাসনের ভালো পদে চলে আসবেন বলে বিভিন্ন জায়গায় জানান দিচ্ছেন।
জানা যায়, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ। তিনি সব সময়ই একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওই সময়ে ওই সিন্ডিকেটের বাইরের কেউ ভালো পদায়ন পাননি। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রীর দ্বিতীয় মেয়াদে বাড়ৈকে এপিএস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনি ওএসডি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে যিনি ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন, তিনি মূলত ২০০৯ সাল থেকে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি বাড়ৈর হাত ধরেই ২০০৯ সালে মাউশি অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক হন।
এরপর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে নোয়াখালীতে বদলি করা হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে কিছুদিনের মধ্যে ফের তিনি ঢাকা বোর্ডে আসেন। এরপর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বদলি হওয়া অনেক কর্মকর্তার মধ্যে তিনিও ছিলেন। তখন তাঁকে মাদরাসা বোর্ডে পদায়ন দেওয়া হয়। আবারও তিনি ফিরলেন ঢাকা বোর্ডে।
মাদরাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভাগীয় মামলা। এর আগে তাঁকে একাধিকবার বদলি করা হলেও তিনি ঠিকই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও জুনিয়র কর্মকর্তা।
তিনি এর আগে বোর্ডের উপরেজিস্ট্রার ছিলেন। মাদরাসা বোর্ডে পদায়ন পাওয়া অন্য কর্মকর্তারাও রাজনীতিতে অন্য ঘরানার বলে জানা যায়। মাউশি অধিদপ্তরের শারীরিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিভাগে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের অনেকের ব্যাপারেই রয়েছে নানা অভিযোগ। এমনকি কারো কারোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রয়েছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, মহাপরিচালক, পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সিনিয়র অধ্যাপকদের পদায়নের বিধান রয়েছে। কারণ এসব পদে থেকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সিনিয়র অধ্যাপকদের এসিআর, বিভিন্ন নির্দেশনাসহ নানা কাজ করতে হয়। এ কারণে এসব পদে সিনিয়র অধ্যাপকদেরই আশা করেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
তবে স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের নেতাদের কাছে এই পদায়নের ব্যাপারে জানতে চাইলে তাঁরা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। অবশ্য মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এসব পদে বদলি-পদায়ন মন্ত্রণালয়ের হাতে। তবে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেন, জুনিয়ররা বড় পদে বসলে অন্যদের মধ্যেও একই প্রবণতা তৈরি হবে। যার মাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী, তিনি তত বড় পদে পদায়ন পাবেন। এতে ক্যাডারের শৃঙ্খলা ঝুঁকিতে পড়বে।