আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ আরব আমিরাতের শ্রমবাজার

বিশেষ প্রতিনিধি

ছয় বছর ধরে প্রায় বন্ধ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দুই লাখের বেশি শ্রমিক রফতানি হলেও গত বছর গেছে মাত্র ৩ হাজার ২৩৫ জন, যার ৭৫ শতাংশই ছিল প্রধানত গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারী কর্মী। ১৯টি খাতে পুরুষ কর্মী নিতে গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল দেশটি, যদিও তা এখনো আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমিরাতে বন্ধ থাকা শ্রমবাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে গত বছরের ১৮ এপ্রিল দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। ওই সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ থেকে ১৯টি ক্যাটাগরিতে কর্মী নিয়োগের বিধান, পদ্ধতি, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি ও উভয় দেশের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য, কর্মীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, নিয়োগকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, নিয়োগ চুক্তির বিধান ও পৃথক একটি বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে সময় বলা হয়েছিল, শিগগিরই এ বাজার পুরোপুরি খুলে যাবে। কিন্তু সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কর্মী পাঠানোর বিষয়ে কোনো ঘোষণা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে আমিরাতে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছে। তারা মূলত নির্মাণকাজে যুক্ত। আমিরাতের শ্রমবাজার অফিশিয়ালি বন্ধ নয়। নিয়মিতই সেখানে বাংলাদেশী শ্রমিক যাচ্ছে।

universel cardiac hospital

সংযুক্ত আরব আমিরাতে পুরুষ শ্রমিকদের জন্য বাজার এক রকম বন্ধই রয়েছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মাত্র ৩ হাজার ২৩৫ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন, যাদের মধ্যে ২ হাজার ৪২৭ জনই ছিলেন নারী কর্মী। আর ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ৪ হাজার ১৩৫ জন, যাদের মধ্যে নারী কর্মী ছিলেন ৩ হাজার ২৭২ জন। অথচ ২০১২ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২, ২০১১ সালে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৯ এবং ২০১০ সালে ২ লাখ ২ হাজার ৩০৮ এবং ২০০৮ সালে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক গিয়েছিলেন দেশটিতে ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আমাদের একটি অন্যতম শ্রমবাজার। গত বছর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশটিতে বৃহৎ আকারে কর্মী প্রেরণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরেও এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে ভিসা প্রদান স্থগিত রেখেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রতিদিন ৬০০ জনের ভিসা দেয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভিসা ও কনস্যুলার অফিস খোলে দেশটি। যদিও গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ২৭০টি শ্রম ভিসা দেয়া হয়েছে ওই ভিসা অফিস থেকে।

এদিকে গত বছর বাংলাদেশকে দেয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশীদের জন্য ধাপে ধাপে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশটির সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হলেও এ পর্যন্ত ফল আসেনি।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, বর্তমানে নতুন বাজার খোলার দিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কয়েকটি শ্রমবাজার চালুর জন্য কাজ চলছে। একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবারো কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আমিরাতের শ্রমবাজার চালু করতে বিগত কয়েক বছরে কূটনৈতিক পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। নিরাপত্তা ও বন্দিবিনিময়-সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তি সই করে দুই দেশ। যদিও ২০১৩ সালে ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ দুবাইকে প্রথম দফায় ভোট না দেয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত অসন্তুষ্ট হয়। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ রাশিয়াকে সমর্থন দেয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে