স্যাটেলাইট ও সাবমেরিন ক্যাবল উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে প্রাইভেট খাতে

বিশেষ প্রতিবেদক

স্যাটেলাইট ও সাবমেরিন ক্যাবল উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে
ফাইল ছবি

সরকার প্রাইভেট খাতে স্যাটেলাইট ও সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ উন্মুক্ত করে দিতে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সক্ষমতা আরও বাড়াতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ও বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল ও বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবসা পরিচালনা করছে।

এ উদ্দেশ্যে দুটি আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে বলে জানালেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তিনি বলেন, স্যাটেলাইট (উপগ্রহ) ব্যবসার খসড়া নীতিমালা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে নীতিমালা পাস করা হবে।

দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ গত বছরের মে মাসে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এতে খরচ পড়েছে দুই হাজার ৭৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে মহাকাশের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানো ৫৭ দেশের অভিজাত ক্লাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো উপগ্রহ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজেই এটি এখন মুদ্রায় রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রাইভেট খাতের।

তিনি বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ থেকে কোনো অর্থ আসছে না। কিন্তু এটি দুনিয়াজুড়ে দেশকে ব্যাপক মর্যাদা এনে দিয়েছে। বিশ্বের দিকে নজর দিলে আপনি দেখতে পাবেন, এই খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগ। সরকার তাদের জন্য বিষয়টি সুবিধাজনক করে দিচ্ছে।

দেশের ৩১টি টেলিভিশন চ্যানেল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি চট্টগ্রাম, সময়, ডিবিসি নিউজ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, এনটিভি, একাত্তর, বিজয়, বৈশাখী টেলিভিশন এই উপগ্রহ ব্যবহার করে তাদের কর্মসূচি সম্প্রচার করছে।

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে বিএসসিসিএলের দুটি ক্যাবল সংযোগ রয়েছে-এসইএ-এমই-ডব্লিউই ৪ এবং এসইএ-এমই-ডব্লিউই ৫। ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বাড়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আরেকটি সংযোগের প্রস্তুতি চলছে।

দেশে বর্তমানে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার প্রতি সেকেন্ডে ১.২ টেরাবাইট। এর মধ্যে প্রতি মিনিটে ৬৭০ গিগাবাইটস আসে বিএসসিসিএল থেকে আর বাকিটা ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

নীতিনির্ধারকদের হিসাব বলছে, ২০২৩ সাল নাগাদ দেশের মোট ব্যান্ডউইথের চাহিদা থাকবে ছয় টিবিপিএস। আর বিএসসিসিএলের বর্তমান সক্ষমতা হচ্ছে তিন টিবিপিএসের কম।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কাজেই তার আগেই ব্যান্ডউইথ উৎপাদনের নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে সরকারকে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক দুটি কোম্পানি সিংটেল ও সিগমারের কাছ থেকে পাওয়া দুটি আলাদা প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছে সিএসসিসিএল। তারা দেশে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে চায়।

সরকার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে এ খাতে লাভের অংশ করতে চায়। মোস্তাফা জাব্বার বলেন, আসছে দিনগুলোতে এই যোগাযোগের খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাজেই আমরা এখন সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।

মে মাস পর্যন্ত দেশে ৯ কোটি ৪৫ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। সরকার যদি ঠিকঠাকভাবে দেশকে ডিজিটালের পথে নিয়ে যেতে পারে, তবে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিজিটাল সেবাকে মসৃণভাবে এগিয়ে নিতে কয়েকটি সাবমেরিন কেবল সংযোগ দরকার।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে