ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ : ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার

মত ও পথ প্রতিবেদক

ধর্ষণ করা হয় ঢাবি ছাত্রীকে
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে এই ঝোপের মধ্যে ধর্ষণ করা হয় ঢাবি ছাত্রীকে। ছবি : সংগৃহিত

রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় সড়কের পাশের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

universel cardiac hospital

তিনি বলেন, ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা হবে।

ডিসি সুদীপ কুমার আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের দুটি সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এই মামলাটি তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর বিভাগ) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস থেকে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে রোববার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন।

গভীর রাতে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

এরপর সোমবার সকালে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে যাওয়ার পথে একটি ঝোপের মধ্য থেকে ভিকটিমের বই, ঘড়ি, ইনহেলার ও চাবির রিংসহ বেশ কিছু আলামত পাওয়া যায়।

ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।

এদিকে ধর্ষণের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঘটনার দিন রাতেই ধর্ষকদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিক্ষোভ করেছে।

জানা গেছে, রাজধানীর কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যেতে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠেন ওই ছাত্রী। বাস থেকে কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তার মুখ চেপে ধরে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

এরপর তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাকে আবাসিক হলে নিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী বলেছেন, রোববার সন্ধ্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য একসঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা এলাকায় বাস থেকে নামেন। সেখান থেকে অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান ফিরে পান ওই ছাত্রী। পরে পাশবিক নির্যাতনে আবারও জ্ঞান হারান।

রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফেরে ওই ছাত্রীর। তিনি তার বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসে যান। পরে তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

‘ধর্ষককে দেখলে চিনবেন ঢাবির সেই ছাত্রী’

ধর্ষককে দেখলে চিনতে পারবেন কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী। তিনি এমনটিই জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমকে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীকে দেখে বেরিয়ে এসে নাছিমা বেগম বলেন, তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর কথা হয়েছে। তিনি ধর্ষককে দেখলে চিনতে পারবেন। তার কথার ভিত্তিতে অপরাধীর একটা স্কেচ করা যেতে পারে। এতে আসামি দ্রুত শনাক্ত হবে বলেও মনে করেন নাছিমা বেগম।

ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের সব আলামত স্পষ্ট জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মেয়েটি সাহসী। তাকে ধর্ষণের সব আলামত পাওয়া গেছে। তিনি আশা করেন, দ্রুত আসামি ধরা পড়বে।

ওই ছাত্রীর বুদ্ধির প্রশংসা করে নাছিমা বেগম বলেন, ঢাবি ছাত্রী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। আলামত নষ্ট হতে দেয়নি। এখন পরীক্ষা করে ডিএনএ মিলিয়ে প্রকৃত ধর্ষককে শনাক্ত করা কঠিন হবে না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে